ইট তৈরির জন্য ভাঁটা স্থাপন সংক্রান্ত একটি আইন দেশে কার্যকর রয়েছে। আইনটির নাম ‘ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন’। সেই আইন অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া ইট তৈরি করার সুযোগ নেই। লাইসেন্স ছাড়া কেউ ইটভাটা চালু করলে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। এজন্য অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। আইন যদি কার্যকর না হয়, তাহলে আইন থেকেও কোনো লাভ নেই। কালীগঞ্জে তারই প্রমান মিলছে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১৯ টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটা গুলো মানছে না ইট তৈরি ও ভাঁটা স্থাপন আইন। ইচ্ছেমতো আবাসিক, কৃষি জমি ও পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় বেশকিছু ব্রিকস স্থাপন করা হয়েছে। আর এসব ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে মূল্যবান বনজ ও ফলদ গাছ। ভাটার ধূলা, কালো ধোঁয়া ও আগুনের তাপে ধ্বংস হচ্ছে নিকটবর্তী এলাকার সবুজ মাঠ, বনজ সম্পদ ও ফলদ গাছ।
এ উপজেলায় ইট প্রস্তুতকারী এমন অবৈধ ইটভাটা গুলোতে দিনরাত অবাধে কাঠ পোড়ানো শুর করেছে বছরের শুরুতেই। অনেক ইটভাটায় ফসলি জমির মাঝখানে করা হয়েছে। কোনো প্রকার নিয়মনীতিই মানা হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় কাজপত্র নেই, আবার অনেকর লাইসেন্স এর নবায়ন করা নেয়, কোনোটির আবার অনুমোদনও নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে ভাঁটা গুলোতে। ধোঁয়ার কারণে মরে যাচ্ছে আশপাশের গাছপালা। ফলে পরিবেশ হচ্ছে বিপন্ন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটার চারপাশে শত শত মণ কাঠ সাজানো। গাড়িতে করে গাছ কেটে এনে কাঠ পরিমাপ করা হচ্ছে প্রকাশ্যে ভাটার সামনে। ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে গাছের গুড়ি পোড়ানো হচ্ছে।বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭-এর ৭ ধারা অনুযায়ী কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। মানছে না আইন, ইট ভাটায় পুড়ছে কাঠ- হুমকিতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ
এ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রথমবার সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও সাজার বিধান রাখা হয়েছে। তৃতীয়বার এ অপরাধের পুনরাবৃত্তিতে ভাটার নিবন্ধন বাতিল ও ভাঁটা বাজেয়াপ্ত করারও বিধান রাখা হয়েছে। কাগজে-কলমে এসব আইন বাস্তবায়নে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই। এদিকে, ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-তে বলা হয়েছে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, হাট-বাজার এলাকা; সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর; এবং বন, অভয়ারণ্য, বাগান, জলাভূমি ও কৃষি জমিতে ইট ভাঁটা স্থাপন করা যাবে না। তবে আইনের তোয়াক্কা না করেই কালীগঞ্জে অধিকাংশ ইট ভাঁটা স্থাপন করা হয়েছে ঘনবসতিপূর্ণ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন ফসলি জমিতে।
ইট ভাটার শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন ইট পোড়াতে প্রায় ৭০-৮০ মণ (১ মণে ৪০ সের) জ্বালানি কাঠ লাগে। এ মৌসুমে ইতোমধ্যে ভাঁটা গুলোতে ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ইটভাটায় এসব জ্বালানি কাঠ যাচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধীন থেকে। ইটভাটায় গাছের ছোট ছোট ডালপালা বা পাতা ব্যবহার হয় না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মোটা মোটা গাছ করাত দিয়ে কেটে ছোট ছোট টুকরা করে ইটভাটার চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে রেন্ট্রি গাছ, আম গাছ, শিশু গাছ, খেজুর গাছ,তাল গাছও অধিক পরিমানে পোড়ান হয়।
স্থানীয়রা জানান, ইটভাটায় প্রতিদিন শত শত মণ কাঠ কিনে প্রকাশ্যেই পোড়ানো হচ্ছে। উজাড় হচ্ছে এলাকার গাছপালা। পরিবেশ হচ্ছে বিপন্ন। তা কেউ দেখছে না।আর প্রশাসন রয়েছে নীরব। প্রশাসনের কেউ কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করছে না। কোনো প্রকার অনুমোদন ও নিয়মনীতির ধার ধারছেন না ভাঁটা মালিকরা। একাধিক ইটভাটার মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায় বর্তমানে কয়লার অত্যধিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে ইট পোড়ানো জ্বালানি খরচ অধিক বেড়ে যাওয়ায় তারাও বিপাকে রয়েছে।
এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন চুনুর সাথে কথা বলে জানা যায়,ইটভাটা গুলো ছাড়পত্র নেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। প্রত্যেকেকই নিয়ম নীতির মধ্যে থেকে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য বলা হয়েছে, আবারো বলবো।
ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রুপ মজুমদার জানান, কালীগঞ্জ উপজেলায় মাত্র ৪ টি ইটভাটার ছাড়পত্র রয়েছে। বাকি গুলোকে ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আমি চিঠির মাধ্যমে ইটভাটা মালিকদেরকে অবগত করেছি। অবৈধভাবে কোন ইটভাটা পরিচালনা করার কোন সুযোগ নেই। আগামীতে ইটভাটা গুলোতে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করব।