
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি ১৯৪৭ সালে ভারত ছেড়ে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে উপমহাদেশকে দুটি রাষ্ট্রে বিভক্ত করে। এর একটি হচ্ছে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত অপরটি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান। পাকিস্তান আবার ছিল পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান এই দুই অংশে বিভক্ত, যার এক অংশ থেকে অন্য অংশের দূরত্ব ছিল প্রায় দেড় হাজার মাইল। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ধর্ম ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে মিল ছিল না। দু অংশের ভাষা, সংস্কৃতি লোকাচার ও ঐতিহ্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
আয়তনে পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় ছোট হলেও জনসংখ্যায় পূর্বপাকিস্তান ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু জন্মের পর থেকেই পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা অগণতান্ত্রিক উপায়ে কুক্ষিগত করে রাখে পশ্চিম পাকিস্তানীরা। ফলে অর্থনৈতিকভাবে তুলনামূলক সমৃদ্ধ হতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তান। আর সঙ্গত কারণেই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ নিজেদেরকে বঞ্চিত ভাবতে শুরু করে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল, বিজয়ী হলে স্বায়ত্বশাসনসহ পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অধিক সুযোগসুবিধা প্রধান। কিন্তু পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টের অধিবেশন ডেকেও অনির্দিষ্টকালের জন্য তা স্থগিত ঘোষণা করলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে পূর্বপাকিস্তানের মানুষ। আন্দোলন ক্রমশ জঙ্গিরূপ ধারণ করতে থাকে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানী শাসকচক্র সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেয় পূর্ব পাকিস্তানিদের ওপর। সৈন্যরা নির্বিচারে হত্যা করে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ। বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নারী নির্যাতন সকল সীমা ছাড়িয়ে গেলে মানুষ রুখে দাঁড়ায়। গঠিত হয় গেরিলা বাহিনী। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ভারতের সহযোগিতায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জন করে পূর্ব পাকিস্তান। জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্ট্র।