
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে রুশবাহিনী কোরিয়ার উত্তরাংশ এবং মার্কিনবাহিনী দক্ষিণাংশ দখল করে নেয়। দুই বিপরীত আদর্শের দখলদার দেশের প্রভাবে শেষপর্যন্ত ১৯৪৯ সালে কোরিয়া ভেঙে দুটি দেশের সৃষ্টি হয়। কমিউনিস্ট আদর্শের অনুসারী উত্তর কোরিয়া এবং পুঁজিবাদের অনুসারী দক্ষিণ কোরিয়া।
দুই কোরিয়ার একত্রীকরণের লক্ষ্যে ১৯৫০ সালের ২৫ জুন উত্তর কোরীয়বাহিনী দক্ষিণ কোরিয়া আক্রমণ করলে কোরীয় যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এমনি পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়াকে সাহায্য করার জন্য জাতিসংঘ তার সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহবান জানায়। এই আহবানে সাড়া দিয়ে ১৭টি দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার সাহায্যার্থে সৈন্য পাঠায়, যার বড় অংশই ছিল মার্কিন সৈন্য। কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়ার চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্বমুহুর্তেই জাতিসংঘবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার সাহায্যে এগিয়ে আসে।
জাতিসংঘ ও দক্ষিণ কোরীয়বাহিনী আক্রমণকারী সৈন্যদেরকে শুধু তাড়িয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, আক্রমণ করে বসে উত্তর কোরিয়া। একপর্যায়ে ২৪ নবেম্বর যৌথবাহিনী পৌঁছে যায় উত্তর কোরিয়া ও চীনের সীমান্তবর্তী ইয়ালু নদীর তীরে। এমনি পরিস্থিতিতে চীন এক বিশাল বাহিনী পাঠায় কোরিয়ায়। এর ফলে জাতিসংঘবাহিনী ফিরে যেতে বাধ্য হয় দক্ষিণ কোরীয় ভূখণ্ডে অভ্যন্তরে।
এরপর জাতিসংঘবাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালালে প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ১৯৫১ সালের জুলাই মাসে রাশিয়ার প্রস্তাবের ভিত্তিতে শুরু হয় যুদ্ধবিরতি আলোচনা। প্রায় দুবছর ধরে চলা আলোচনাকালে দুপক্ষের মধ্যে সংঘটিত হয় কয়েকটি বড় ধরনের সংঘর্ষ। অবশেষে যুদ্ধপূর্ব সীমান্ত মেনে নিয়ে ১৯৫৩ সালের জুলাইয়ে দুই কোরিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী কোরীয় যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি ছিল ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। এ যুদ্ধে হতাহত হয় প্রায় ২৫ লাখ সেনাসদস্য। বেসামরিক প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ।