
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় এবং কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়মের সিংহাসন ত্যাগের পর ১৯১৯ সালে জার্মানিতে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয় সংসদ প্রজাতন্ত্রের জন্য নতুন একটি
সংবিধান প্রণয়ন করে এবং তা অনুমোদনের জন্য পার্লামেন্টের অধিবেশন আহবান করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় ও অবমাননাকর শান্তি চুক্তি মেনে নেয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতার হামলার আশঙ্কায় সংসদের অধিবেশন রাজধানী বার্লিনের পরিবর্তে বসে প্রত্যন্ত ভাইমার শহরে। এ অধিবেশনেই অনুমোদিত হয় প্রজাতন্ত্রের নতুন সংবিধান।
প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ফ্রিডরিশ ইবার্ট, যিনি ছিলেন একজন সমাজতন্ত্রী। ১৯২৫ সালে তার মৃত্যুর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন ফিল্ডমার্শাল পল ফন হিডেনবুর্গ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন জার্মানির সুপ্রিম কমান্ডার। কিন্তু কমান্ডার হিসাবে কিছুটা সুনাম থাকলেও শাসন কাজে তিনি যোগ্যতা ও দক্ষতার তেমন কোন স্বাক্ষরই রাখতে পারেননি। আর এ সময় বয়সের ভারে তিনি ছিলেন নজ, অতিক্রম করছিলেন ৭৮ বছর।
১৯৩২ সালে অনুষ্ঠিত হয় জার্মানির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তখন দেশে চলছিল অর্থনৈতিক সঙ্কট। জার্মান মুদ্রা মার্কের মূল্য গিয়ে ঠেকেছিল একেবারে তলানিতে। বেকার হয়ে পড়েছিল ৬০ লাখ মানুষ। নির্বাচনে ন্যাশনাল সোশালিস্ট পার্টি (নাসি) নেতা এডলফ হিটলারকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট পুননির্বাচিত হন হিন্ডেনবুর্গ।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হলেও নাৎসি পার্টি রাইখস্ট্যাগ বা পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, যদিও সরকার গঠনের মত সংখ্যাগরিষ্ঠতা তারা পায়নি। অন্যান্য ছোটখাট দলের সঙ্গে কোয়ালিশন করে নাৎসি পার্টি সরকার গঠন করে এবং হিটলার নির্বাচিত হন চ্যান্সেলর বা প্রধানমন্ত্রী। ১৯৩৩ সালের ৩০ জানুয়ারি হিটলার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২৩ মার্চ হিটলার তার সরকারকে সর্বময় ক্ষমতা দিয়ে একটি আইন পাস করিয়ে নেন পার্লামেন্টে।
নাৎসিরা জার্মানিতে তাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। নাৎসি পার্টিকে জার্মানির একমাত্র রাজনৈতিক দল হিসাবে ঘোষণা করা হয়। প্রদেশগুলোর ক্ষমতা হ্রাস করে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। শুরু হয় ইহুদি নিপীড়ন, স্থাপিত হয় বন্দিশিবির। ধর্মঘট ও লকআউট নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৩৩ সালের অক্টোবরে জার্মানি লিগ অব নেশনস এবং নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসে।