
বিশ শতকের গোড়ার দিকে তিনটি বিপ্লব রাশিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। প্রথম বিপ্লবটি সংঘটিত ১৯০৫ সালে। জাপানের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়কে কেন্দ্র করে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে এ বিপ্লব সংঘটিত হয়। কিন্তু রুশ সম্রাট দ্বিতীয় জার নিকোলাসের সেনাবাহিনী ১৯০৬ সালে ওই বিপ্লব রক্তাক্ত উপায়ে ধ্বংস করে দেয়।
অন্য বিপ্লবটি সংঘটিত হয় ১৯১৭ সালে। মূলত ৮ মার্চ শুরু হলেও এটা ফেব্রুয়ারি বপ্লব হিসাবেই পরিচিতি পায়। রুশ সৈন্যরা তাদের বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজধানী পেত্রোগ্রাদে ধর্মঘট, দাঙ্গা ও বিদ্রোহের মাধ্যমে এ বিপ্লবের সূচনা করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় এই অশান্ত পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যায়। কোন কিছুর ওপরেই সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় দেখা দেয় চরম খাদ্যঘাটতি। এমনি নাজুক পরিস্থিতিতে জার সিংহাসন ত্যাগে বাধ্য হন এবং রাজকুমার জর্জি লভভাভের অধীনে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এতেও পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি না হওয়ায় মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে রাশিয়ায় আলেকজান্ডার কেরেনস্কির নেতৃত্বে গঠিত হয় দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী সরকার।
জাতীয়তাবাদী চরিত্রের নতুন এ সরকার দৃষ্টিভঙ্গীর দিক থেকে ছিল অনেকটা উদার। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির কট্টর অংশ বলশেভিকরা ক্ষমতা দখলে ছিল উন্মুখ। এ সময় বলশেভিকদের প্রধান নেতা ম্লাদিমির ইলিইচ লেনিন নির্বাসিত জীবনযাপন করছিলেন সুইজারল্যান্ডে। জার্মান সরকার লেনিনকে একটি বিশেষ ট্রেনে করে রাশিয়ায় ফেরার ব্যবস্থা করে দেয়। সঙ্গত কারণেই জার্মানি ভেবে নেয়, দেশে ফিরে লেনিন ক্ষমতা দখল করবেন এবং রাশিয়াকে যুদ্ধ থেকে প্রত্যাহার করে নেবেন।
এদিকে বলশেভিকরা লেনিনের সহকর্মী লিয়ন ত্রৎস্কির নেতৃত্বে সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পেত্রোগ্রাদে শ্রমিকদের একটি সোভিয়েত (কাউন্সিল) ইতিমধ্যেই গঠন করে ফেলেছে। ৬ নবেম্বর রাতে শুরু হয়ে যায় অক্টোবর বিপ্লব। সেনাবাহিনীর সহায়তায় সশস্ত্র বলশেভিক কর্মীরা অস্থায়ী সরকারের সদস্যদের গ্রেফতার করে ক্ষমতা দখল করে নেয়। নবনির্বাচিত গণ-পরিষদে বলশেভিকরা ছিল সংখ্যালঘু। সুতরাং তারা তা ভেঙে দেয়। নতুন সরকার অবিলম্বে ভূমি নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য উৎপাদনে আত্মনিয়োগ করে। এ ছাড়া সরকার গির্জার জমিও বাজেয়াফত করতে শুরু করে। কমিউনিস্ট সরকার এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনায় জারের চেয়েও বেশি একনায়কসুলভ আচরণ করে। সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে লেনিন প্রতাশ্যা মতোই জার্মানির সঙ্গে শান্তি স্থাপন করেন এবং পেত্রোগ্রাদ থেকে রাজধানী মস্কোয় স্থানান্তর করেন।
বিপ্লবের পর থেকে বন্দি করে রাখাহয় ক্ষমতাচ্যুত সম্রাট জার নিকোলাস ও তার পরিবারের সদস্যদের।
১৯১৮ সালে জারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
রুশ কালপঞ্জি
১৯১৭ সালের প্রথম বিপ্লবের নাম দেয়া হয়েছে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব, যদিও তা সংঘটিত হয়েছিল মার্চ মাসে। আবার একই বছরের নবেম্বরে অনুষ্ঠিত বিপ্লবকে বলা হয় অক্টোবর বিপ্লব। কারণ গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি চালু করার ক্ষেত্রে রাশিয়া অবশিষ্ট ইউরোপ থেকে বেশ পিছিয়ে ছিল। ১৯১৭ সাল নাগাদ রুশ অনুসৃত বর্ষপঞ্জি অবশিষ্ট ইউরোপ থেকে ১৩ দিন পিছিয়ে ছিল। নতুন শাসকরা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের পর চালু করে অবশিষ্ট ইউরোপের সঙ্গে অভিন্ন পঞ্জিকা। কিন্তু বিপ্লবের আগের নামগুলো অপরিবর্তিতই থেকে যায়।