
ইউরোপের অতি কাছে অবস্থিত হলেও একশ বছরের কিছু বেশি সময় আগেও আফ্রিকা মূলত ব্যাপকভাবে অপরিচিতই ছিল। আফ্রিকার উপকূলে কাঠ, হাতির দাঁত এবং দাসব্যবসার কেন্দ্র গড়ে ওঠে এবং সেখানে কিছু বন্দরের পত্তন হয়। ১৮ শতকের মাঝামাঝি অবধি আফ্রিকার অভ্যন্তরে খুব কমই অভিযান পরিচালিত হয়েছে এবং খুব অল্পসংখ্যক উপনিবেশ গড়ে উঠেছে। অ্যাঙ্গোলা ও মোজাম্বিক ছিল পর্তুগালের অধীনে; ব্রিটেনের অধীনে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ কলোনি, আর ফ্রান্স তার ঘাঁটি গড়ে পশ্চিম আফ্রিকায়।
১৮৬০ ও ১৮৭০-এর দশকে লিভিংস্টোন ও স্ট্যানলির আফ্রিকা অভিযানের ফলে আফ্রিকার সম্পদের প্রাচুর্য সম্পর্কে আগ্রহের সৃষ্টি হয়। আর তারই ফলে ১৮৮০-এর দশকে ইউরোপের দেশগুলো আফ্রিকায় উপনিবেশ গড়তে নির্লজ্জের মতো কাড়াকাড়ি শুরু করে দেয়। ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও জার্মানির উচ্চাকাঙক্ষা নিয়ে ব্রিটিশ ও পর্তুগিজরা সন্দিহান হলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এই উত্তেজনা প্রশমনের জন্য জার্মানির চ্যান্সেলর অটো ফন বিসমার্ক বার্লিনে এক সম্মেলনের আয়োজন করেন (১৮৮৪ সালের নবেম্বর থেকে ১৮৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত)। এই সম্মেলনে যার যার প্রভাবান্বিত এলাকাকে স্বীকার করে নেয়া হয় এবং কঙ্গো ও নাইজার নদীতে নৌ চলাচলের ক্ষেত্রে সবাইকে স্বাধীনতা দেয়া হয়।
সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জার্মানির দখলে যায় টোগোল্যান্ড (বর্তমানে টোগো) ও পশ্চিম আফ্রিকার ক্যামেরুন, দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা (নামিবিয়া) ও জার্মান পূর্ব আফ্রিকা (বর্তমানে তাঞ্জানিয়া); বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয়. লিওপোল্ড কঙ্গোতে (বর্তমানে জায়ারে) কলোনি গড়ে তোলেন; ফ্রান্স পায় আইভরি কোস্ট ও মাদাগাস্কারের দখল আর ব্রিটেন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে নাইজেরিয়া, বেচুয়ানাল্যান্ড (বর্তমানে বতসোয়ানা), রোডেশিয়া, জাঞ্জিবার, উগান্ডা ও ব্রিটিশ পূর্ব-আফ্রিকার (কেনিয়া) ওপর। মিসর সরকারের ওপর যৌথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ব্রিটেন ও ফ্রান্স, কিন্তু সুদান নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে তাদের ভেতর সংঘাত দেখা দেয়Ñএটি ছিল ব্রিটেন ও মিসরের যৌথ এলাকা। ইতালি ইথিওপিয়াকে আশ্রিত রাজ্যে পরিণত করে, কিন্তু ইথিওপিয়া ইতালীয়দের পরাজিত করে এবং স্বাধীন থেকে যায়। ১৯০২ সাল নাগাদ আফ্রিকায় স্বাধীন দেশ হিসাবে টিকে ছিল একমাত্র লাইবেরিয়া।