
ফরাসি বিপ্লবের সময়ে এবং তার অব্যবহিত পরে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে গঠিত প্রথম ও দ্বিতীয় যুদ্ধজোটের পরে ১৮০৪ সালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে তৃতীয় যুদ্ধজেট গঠিত হয়। ১৮০৪ সালে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ফ্রান্সের সম্রাট উপাধি ধারণ করার পর তাঁর উচ্চাকাক্সক্ষাকে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে তৃতীয় যুদ্ধজোট গঠিত হয়। নেপোলিয়নের বিভিন্ন পদক্ষেপে ব্রিটেন আবার ১৮০৩ সালে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং পরের বছর অস্ট্রিয়া, নেপল্স, রাশিয়া এবং সুইডেন ব্রিটেনের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। ফ্রান্সের পক্ষাবলম্বন করে স্পেন।
সমুদ্রে যুদ্ধ : নেপোলিয়ন ইংল্যান্ড আক্রমণের জন্য এক বড় নৌবহর গড়ে তোলেন। কিন্তু ১৮০৫ সালের অক্টোবরে হোরাসিও নেলসন ট্রাফলগারে ফ্রান্স এবং স্পেনের যৌথ নৌবহরকে ধ্বংস করে ব্রিটেনকে দখলদারত্বের হুমকি থেকে মুক্ত করেন।
মধ্য ইউরোপ : নেপোলিয়ন তার সেনাবাহিনীকে অস্ট্রিয়া আক্রমণের হুকুম দেন এবং ১৮০৫ সালে অস্টারলিৎজে তিনি অস্ট্রীয় বাহিনীকে গুড়িয়ে দেন। পরের বছর তিনি প্রুশিয়া দখলের জন্য আক্রমণ করেন এবং জেনা ও অরস্টাডের যুদ্ধে প্রুশিয়াকে পরাজিত করেন। ১৮০৭ সালে তিনি ফ্রেডল্যা-ের যুদ্ধে পরাজিত করেন রাশিয়াকে। ১৮০৮ সালে অস্ট্রিয়া আবার যুদ্ধ ঘোষণা করে, কিন্তু তারা পরাজয় বরণ করে এবং সন্ধি করতে বাধ্য হয়।
স্পেন এবং পর্তুগাল : নেপোলিয়ন ১৮০৮ সালে আইবেরিয়ান উপদ্বীপ তথা স্পেন ও পর্তুগাল আক্রমণ করেন এবং তার ভাই জোশেফকে স্পেনের রাজা নিযুক্ত করেন। স্পেনের জনগণ ব্রিটেনের সাহায্য চাইলে ব্রিটিশবাহিনী পর্তুগালে অবতরণ করে এবং স্পেনের দিকে অগ্রসর হয়। নেপোলিয়ন তাদের উত্তর স্পেনের কোরান্নায় তাড়িয়ে নিয়ে যান। পরে আর্থার ওয়েলেসলি, যিনি পরবর্তী জীবনে ওয়েলিংটনের ডিউক হয়েছিলেন, ব্রিটিশবাহিনীর অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন। পর পর বেশ কয়েকটা যুদ্ধের পর ওয়েলেসলি ফরাসি নৌবহরকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেন এবং নেপোলিয়নকে সেনাবাহিনীর একটা বড় অংশ স্পেনে ফেলে রেখেই পালাতে হয়। শেষ পর্যন্ত ১৮১৪ সালে ব্রিটিশবাহিনী ফরাসি সীমান্ত অতিক্রম করতে সমর্থ হয় এবং ১০ এপ্রিল তুলুয় এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিজয় অর্জন করে।
রাশিয়া : নেপোলিয়ন রাশিয়াকে গুড়িয়ে দিতে দৃঢ়সংকল্প ছিলেন। ১৯২২ সালের জুনে তিনি ৬ লাখ সৈন্য নিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করেন। তিনি মস্কো দখল করেন, যা রুশরা আগুন লাগিয়ে গিয়েছিল। সেখানে তিনি রসদ সঙ্কট ও রুশ শৈত্য প্রবাহের কবলে পড়েন। অধিকাংশ সৈন্য ক্ষয় করে তাঁকে পিছু হটতে হয়। অস্ট্রিয়া, প্রুশিয়া এবং অনান্য জার্মান দেশ রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয় এবং ১৯১৩ সালে রাশিয়া, প্রুশিয়া এবং অস্ট্রিয়ার সম্মিলিত বাহিনী লাইপজিগে নেপোলিয়নকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে। ১৮১৪ সালের এপ্রিল মাসে তিনি সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং এলবায় নির্বাসিত হন।
ঐতিহাসিক একশ দিন : ১৮১৫ সালের মার্চে নেপোলিয়ন এলবা থেকে পালিয়ে ফ্রান্সে প্রত্যাবর্তন করেন। ফ্রান্সের সম্রাট অষ্টাদশ লুই পালিয়ে যান এবং শীঘ্রই নেপোলিয়ন আবার ক্ষমতায় আরোহণ করেন। ওয়েলিংটন এবং প্রশিয়ান মার্শাল গেরহার্ড ফন রুচারের নেতৃত্বে অতি দ্রুত একটি সম্মিলিত মিত্রবাহিনী গঠিত হয়। এই বাহিনী জুনে বেলজিয়ামের ওয়াটারলুতে নেপোলিয়নকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে। নেপোলিয়ন দক্ষিণ আটলান্টিকের সেন্ট হেলেনায় নির্বাসিত হন এবং সেখানে ১৮২১ সালে তিনি মারা যান।
ব্যাপক দেশান্তর : নেপোলিয়নের যুদ্ধের সময় ১৮০৬ সালে ব্রিটিশরা ওলন্দাজদের কাছ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘কেপ কলোনি’ দখল করে নেয়। ওলন্দাজ বসতি স্থাপনকারীরা, যারা বুয়র নামে পরিচিত, ব্রিটিশ শাসনের প্রতি ছিল ক্ষুব্ধ। তাদের অভিযোগ ছিল ১৮৩৩ সালের দাস প্রথা রহিতকরণের ক্ষতিপূরণ পর্যাপ্তভাবে দেয়া হয়নি। ১৮৩৫ থেকে ১৮৩৭ সালের মধ্যে দশ হাজার দেশান্তরি বুয়র নতুন এলাকার খোজে উত্তরের দিকে যাত্রা করে। এখানে তারা নাটাল’ নামক স্থানে জনবসতি গড়ে তোলে। এই অঞ্চলটি এবং অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট ও ট্রান্সভাল নিয়ে স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বুয়র রাষ্ট্র গড়ে তোলার কথা ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা ১৮৪৩ সালে নাটাল দখল করে নিলে সেখানকার বুয়ররা অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট এবং ট্রান্সভালে চলে যায়।