
সপ্তদশ শতকের শেষ দিকে বাল্টিক সাগরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে সুইডেন। তার ক্রমবর্ধমান শক্তি খর্ব করার লক্ষ্যে সুইডেনের তিন প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক, পোল্যান্ড ও রাশিয়া গড়ে তোলে একটি জোট। শুধু জোটগঠন করেই তারা থেমে থাকেনি। ১৭০০ সালে তারা ত্রিমুখী আক্রমণ চালায় সুইডেন নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের ওপর। কিন্তু সুইডেনের ১৮ বছর বয়সী রাজ দ্বাদশ চার্লসের নেতৃত্বে সুইডিশ বাহিনী প্রতিপক্ষের সমস্ত হিসেবনিকেশ উল্টে দেয়। কিশোর রাজা চার্লস তার বাহিনীকে এমন দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেন এবং এত দ্রুতগতিতে পাল্টা আঘাত হানেন যে, শত্রু সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হঠতে বাধ্য হয়। প্রচ- গতিতে শত্রু বাহিনীর ওপর পাল্টা আঘাত হানার জন্য রাজা দ্বাদশ চার্লস খ্যাত হন সুইডেনের উল্কা’ নামে। এর কয়েক মাসের মাথায় তিনি ডেনমার্ককে সুইডেনের সঙ্গে শান্তিস্থাপনে বাধ্য করেন এবং শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন রাশিয়াকে। তৃতীয় প্রতিপক্ষ পোল্যান্ডও নিস্তার পায়নি চার্লসের প্রতিশোধ স্পৃহা থেকে। একটানা ৬ বছর প্রচণ্ড চাপ এবং সামরিক অভিযানের ফলে চার্লসের মিত্র স্টেনিসলাস লেসঝিনস্কির পক্ষে পোল্যান্ডের রাজা সিংহাসন ত্যাগে বাধ্য হন। এর পরই চার্লস তাঁর জীবনের সবচেয়ে যত ভুলটি করে বসেন। পরবর্তী শতাব্দগুলোতে নেপোলিয়ান ও হিটলার যে ভুল করেছিলেন, সেই একই ভুল তিনি করেন রাশিয়া আক্রমণ করে। রাশিয়া সুইডিশ বাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে কেবল প্রতিরোধই গড়ে তুলেছিল। বাকি কাজটা করে দিয়েছে উইন্টার জেনারেল হিসাবে খ্যাত রাশিয়ার হাঁড়কাপানো শীত। শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় রাজা চার্লসের বাহিনী। ইউক্রেনের পোল্টাভা নামক স্থানে রুশ সম্রাট পিটার দ্য গ্রেট এর কাছে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সুইডিশ রাজা চার্লসের সামরিক অভিযানের সমাপ্তি ঘটে। পাঁচ বছরের নির্বাসন দণ্ড শেষে দেশে ফিরে তিনি হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আবার সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু ১৭১৮ সালে এক যুদ্ধে তিনি পরাজিত ও নিহত হন। তবে ১৭২১ সালে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে সুইডেন যুদ্ধের সময় হাতছাড়া হয়ে যাওয়া কিছু ভূখ- ফিরে পায়। আর এই চুক্তির মধ্য দিয়েই রাশিয়া প্রতিষ্ঠিত হয় ইউরোপের নেতৃস্থানীয় শক্তি হিসাবে।