৩ বছর শিশু আহমেদ হোসেন বাবার অবর্তমানে থাকতো সৎ মা কোহিনূর বেগমের সাথে বাবার বাড়ি হাজীগঞ্জের জিয়ানগর এলাকায়। গত সপ্তাহে মা কোহিনুর বেগম ছেলে আহমেদকে নিয়ে বেড়াতে যান বাবার বাড়ি লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায়। সেখানে গত শুক্রবার রাতের কোন একসময় আহমেদকে হত্যা করে বাবার বসতঘরে মাটি চাপা দিয়ে চলে আসেন স্বামীর বাড়ি হাজীগঞ্জের জিয়ানগরে। জিয়ানগরে কোহিনূর বেগম একা ফিরেছেন এমন বিষয়টি শিশুটির বাবার পরিবার নিশ্চিত হওয়ার পরেই কোহিনূর বেগম নানান ফন্দি আঁটতে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের ব্যাপক জিঞ্জসাবাদের কোহিনূর বেগম হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সব অকপটে শিকার করে। এর বেরিয়ে আহে আহমেদ হত্যার মূল রহস্য।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, স্বামীর বাড়ি জিয়া নগরে এসে আহমেদকে নিয়ে নানান গল্প আঁটেন কোহিনূর বেগম। বাড়ির লোকজন নিশ্চিত হন কোহিনুর বেগম বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে একা ফিরেছেন। এমন বিষয়টি বাড়ির লোকজন নিশ্চিত হওয়ার পর চাপ বাড়ে কোহিনূরের উপর। তখনই কোহিনূর বলেন গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হন আহমেদ। কোহিনূরের কথার সূত্র ধরে গত রোববার (২৮ আগষ্ট)জিয়ানগরের এশটি পুকুরে ডুবুরি নামে আহমেদের খোঁজে। ডুবুরী দল আহমেদের খোঁজ না পাওয়ায় শিশুটির বাড়ির লোকজনের মাধ্যমে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ৮ মাসের আন্তঃসত্তা কোহিনূর বেগমকে প্রাথমিক বিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত রোববার রাতে থানায় নিয়ে যায়। রাতভর ও সোমবার(২৯ আগষ্ট) দুপুর পর্যন্ত পুলিশের কাছে মুখ খোলেনি কোহিনূর। সোমবার দুপুরের পরেই কোহিনূর হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সৎ ছেলেকে হত্যা করে বাবার বাড়ির বসতঘরে মাটি চাপা দেয়া আছে বলে স্বীকার করে। এর পরেই হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ রামগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয় কোহিনূর বেগমকে। এ ঘটনায় রামগঞ্জ থানা পুলিশ কোহিনূর বেগমকে আটক করেছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে শিশুটির বাবা হাফেজ শাহ আলমসহ সৎ খালা ও সৎ নানীকে। কোহিনূর বেগম লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের চকিদার বাড়ির মরহুম মোবারক হোসেনের মেজো মেয়ে। শাহ মিরান হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল ইউনিয়নের রায়চোঁ গ্রামের দণি ছৈয়াল বাড়ির মরহুম জয়নাল আবেদিনের ছেলে। কোহিনূর ও শাহ মিরান দম্পত্তির এটি দ্বিতীয় বিয়ে। উভয়ের প্রথম ঘরে একটি করে সন্তান রয়েছে। মায়ের হাতে হত্যার শিকার আহেমেদ হোনের হাফেজ শাহ মিরানের প্রথম স্ত্রীর সন্তান। শাহ মিরান তার সন্তান নিখোঁজের খবর পেয়ে ঢাকা থেকে বাড়ির আসেন।
এদিকে সোমবার রামগঞ্জ থানা পুলিশের সাথে আহমেদ হোসেনের লাশ উদ্ধার করতে দরবেশপুর গ্রামের চকিদার বাড়িতে সরজমিনে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, পুলিশ যাওয়ার পূর্বেই ঐ বাড়িতে এলাকার হাজার নারী পুরুষের ভিড় জমে। এর পরেই রামগঞ্জ থানা পুলিশ কোহিনূর বেগমকে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছ থেকে বুঝে নিয়ে সরাসরি ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কোহিনূর বেগমের দেখিয়ে দেয়ার ভিত্তিতে তার বাবার বসত ঘর লাগোয়া পিছনের একচলা বারান্ধার ফ্লোরের মাটি খুঁজে লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় হাজার হাজার স্থানীয় বাসিন্ধারা শিশুটির লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত দেখে কোহিনূর বেগমকে ধিক্কার দিতে দেখা যায়।
শিশুটির বাবা শাহ মিরান জানান, কোহিনূর বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাবে সেটা আমাকে বলেছে। এর দুই দিন পর আমাকে সে ফোন করে জানায় তোমার ছেলেকে আমি খুঁজে পাইনি। এর পরেই রোববার আমি বাড়ি এসে হাজীগঞ্জ থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেছি। এর পরেই সন্তানের কথা বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শাহ মিরান।
হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ জোবাইল সৈয়দ জানান, গত রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত সন্তারের নিখোঁজের বিষয়ে মুখ খোলেননি কোহিনূর নামের ঐ নারী। এর পরে সোমবার দুপুরের কিছু পরে সব শিকার করে আমাদেরকে জানায় শিশুটিকে সে তার বাবার বাড়িতে মেরে মাটি চাপা দিয়ে আসছে। এর পরেই আমরা রামগঞ্জ থানাকে পুলিশের হাতে নিয়ম মেনে কোহিনূর বেগমকে তুলে দেই।
এ বিষয়ে লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী জানান, আমরা শিশুটির মায়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতের তাদের বসতঘরের ফ্লোর খুঁড়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করেছি। শিশুটির সৎ মা কোহিনূর বেগম হত্যার কথা শিকার করেছে তাকে আমরা আটক করেছি। অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা পর্যক্ষেন ও তদন্ত করছি তারপর শিশুটির বাবা কিংবা নানী বা খালার বিষয়ে সিন্ধান্ত নেয়া হবে।