হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় সার ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে রোপা আমন চাষ ব্যাহত হচ্ছে। সার ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। এই দুইয়ের প্রভাবে ফসলের উৎপাদন খরচ যে হারে বাড়বে সে তুলনায় দাম পাবেন কিনা তা নিয়েই শঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা। এ বছর বর্ষা মৌসুমে শেষের দিকে হঠাৎ বন্যায় উপজেলার আন্দিউড়া, বুল্লা, ছাতিয়াইন, বাঘাসুরা, আদাঐর ও জগদীশপুর ইউনিয়নের ভাটি এলাকার নিম্নভূমি তলিয়ে যায়। এতে করে সহস্রাধিক একর বোনা আমন ও পাট জমি বন্যার পানিতে বিনষ্ট হয়ে পড়ে। কিন্তু পানি কমতে শুরু করায় আশায় বুক বেধে ধার কর্জ করে রোপা আমন আবাদ করে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। তবে যত সংকট আমন ধানের চারা নিয়ে। বন্যায় অনেক এলাকার বীজতলা তলিয়ে গিয়ে সম্পূর্নভাবে বিনষ্ট হয়ে গেছে। তাই কৃষকরা উজান এলাকা থেকে চড়া মূল্যে চারা সংগ্রহ করে জমিতে রোপন করছেন।
উপজেলার ইটাখোলা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) খামারে বন্যা জনিত সমস্যা মোকাবেলায় কৃষকদের মধ্যে উন্নতমানের চারা বিতরণের নির্দেশ থাকলেও কৃষকরা এ খামার থেকে পর্যাপ্ত ধান গাছ চারা সরবরাহ পাচ্ছে না বলে কৃষকদের অভিযোগ। এ খামারে বন্যা বা দুর্যোগ মোকাবেলায় কৃষি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান বীজের চারা করা হয়নি। এ কারণে খামার থেকে চারা সংগ্রহ করতে পারছে না। এ দিকে দীর্ঘ দিন ধরে ইউরিয়া সার নিয়ে কৃষকরা রীতিমতো বেকায়দায় পড়েছেন। বাজারে চিকন দানার ইউরিয়া সার সরবরাহ কম থাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে অধিক মূল্যে কালো বাজারে চিকন দানার সার আনতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা। হরিশ্যামা গ্রামের কৃষক রতিশ দাশ জানান, চিকন ইউরিয়া সার ৮শ থেকে ৮শ ৫০ টাকা দিয়ে কিনতাম। বর্তমানে ১১শত টাকা বিক্রি হচ্ছে। ১১শত টাকা দিয়েও পর্যাপ্ত পরিমাণে সার পাচ্ছি না।
মুরাদপুর গ্রামের কৃষক বেনু মিয়া জানান-বিগত বছরগুলোতে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় সেচ খরচ হতো না। এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় সেচের পানি দিয়ে জমি চাষ করতে হয়েছে। এক বিঘায় জমিতে এক ঘন্টা সেচ দিতে হয়। আর ঘন্টা সেচের পানির খরচ হয় ১৩৫ টাকা। খরার কারণে দুই একদিন পরপর জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া সার, কীটনাশক, ডিজেল ও শ্রমিক খরচ বেশি। ইউরিয়া, এমপিও, টিএসপি ও ডিএফপি সার খোলা বাজারে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। প্রতি বস্তায় বাড়তি ২০০ টাকা বেশী দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। সময়মত জমিতে সার ও সেচ দিতে না পারায় উৎপাদন কমে যাওয়ার সংকায় রয়েছি।
উপজেলার বিসিআইসির ডিলারগণ জানান, তারা চাহিদা অনুযায়ী চিকন দানার ইউরিয়া সার পাচ্ছেন না। ক্ষেত খামারে এখন সনাতন পদ্ধতির গরু লাঙ্গল জোয়াল দিয়ে চাষ পদ্ধতি নেই বল্লেই চলে। আধুনিক পদ্ধতি কলের লাঙ্গল (ট্রাক্টর) দিয়ে চলছে জমি চাষাবাদের কার্যক্রম। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রাক্টর দিয়ে জমিচাষাবাদ করা হচ্ছে। সার, বীজ, ডিজেল সহ কৃষি উপকরনের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন হাছান জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।