দৈনিক মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে হবিগঞ্জের মাধবপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন চা-শ্রমিকরা। রোববার সকাল ১০ থেকে চা-শ্রমিকরা দলে দলে মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্ত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। ফলে রাস্তার দু’পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
জানা যায় রোববার বেলা ১০টা থেকে হবিগঞ্জের লস্করপুর ভ্যালির ২৩টি চা-বাগানের শ্রমিকরা মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুরে মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক জড়ো হয়। তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিভিন্ন শ্লোগান দিচ্ছে।
এদিকে শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের অফিসে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে চা-শ্রমিকদের নতুন মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের চলমান কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি কর্মসূচি পালনকালে গত ১২ দিনের মজুরি, রেশনসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধা প্রদানের দাবি জানান। কিন্তু কিছুক্ষন পরেই চা-শ্রমিকদেও তোপের মুখে শ্রমিক আন্দোলন প্রত্যাহার না করার ঘোষনা দেন। বৈঠকে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়াসহ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আন্দোলনরত লস্করপুর ভ্যালির সভাপতি রবিন্দ্র গেšড় জানান-শনিবার প্রশাসন জোর করে আমাদের নেতাদের মুখ দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষনা দেয়ায় যা আমাদেও সাধারন শ্রমিকরা মেনে নিতে পারেনি। আমাদেও দাবি পূরন না হলে আমরা আমরা আর বাগানে ফিওে যাব না। রাজপথেই আন্দোলন করব।
চলতি বছরের জুন মাসে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের বৈঠক হয়। সেখানে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দেন শ্রমিক নেতারা। কিন্তু মালিকপক্ষ ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়। যে কারণে শ্রমিক নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর আরও এক মাস পার হয়ে যায়, মালিকপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এর প্রতিবাদে ৯-১২ আগস্ট পর্যন্ত টানা চার দিন প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ধর্মঘট পালন করেন চা-শ্রমিকরা। তারপরও মালিকপক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কথা না বলায় ১৩ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের সব চা-বাগানে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকরা। ঘঁনাস্থলে হবিগঞ্জের সহকারি পুলিশ সুপার মাধবপুর সার্কেল মহসিন আল মুরাদ, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন, থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাকসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন।