মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের গুয়াগাছিয়া গ্রামে গত ১৪ জুলাই ( বৃহস্পতিবার) গোসল করতে পানিতে নেমে ¯্রােতের টানে ভেসে যায় আদনান (১৬) নামের এক কিশোর। এ ঘটনার দুইদিন পরে ঘটনাস্থলের একটু দূরে তার লাশ ভেসে উঠলে পুলিশ তা উদ্ধার করে। এ ঘটনায় প্রথমে একটি অপমৃত্যুর মামলা হলেও পরবর্তীতে ছেলেকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করে ছেলেটির বাবা আলমগীর হোসেন। তবে কিশোরের মায়ের দাবি ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার সাত বছর পরে উৎপাদিতভাবে মামলা দায়ের করে তাকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে তার প্রাক্তন স্বামী। তার দায়ের করা মিথ্যা মামলায় তার গোটা পরিবার এখন বাড়ি ছাড়া।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পারিবারিকভাবে গত প্রায় সাত বছর আগে আলমগীর হোসেন- আছিয়া বেগম দম্পতির বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সংসার জীবনে তাদের আদনান নামে এক ছেলে ছিল। পরবর্তীতে আলমগীর হোসেন ও আছিয়া বেগম নতুন করে সংসার শুরু করেন এবং তাদের উভয়ের সংসারে ছেলে-মেয়ে আছে। আদনান তার দাদার বাড়িতে থাকতো। সংসারে অভাব অনটনের কারণে রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করতো আদনান। গত ১৪জুলাই কাজ শেষে সন্ধ্যায় গুয়াগাছিয়া ব্রিজে এলাকায় খালে গোসল করতে নামে সে। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও গোসল করে না ওঠায় খোঁজখবর শুরু করে তার স্বজনরা। নিখোঁজ হওয়ার দুইদিন পরে ১৬জুলাই ( শনিবার) নিখোঁজ আদনানের লাশ ভেসে উঠলে স্থানীয়রা পুলিশের খবর দিলে পুলিশ তা উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় ছেলেটির বাবা আলমগীর হোসেন গজারিয়া থানায় প্রথমে একটা অপমৃত্যুর মামলা করলেও পরবর্তীতে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নিহত আদনানের মা আছিয়া বেগম বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে হয়রানি করার জন্য তার প্রাক্তন স্বামী আলমগীর হোসেন তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। তিনি তার নতুন স্বামীর বাড়ি লক্ষ্মীপুর গ্রামে থাকতেন আর আদনান থাকতো তার দাদার বাড়িতে। ছেলেটি বড় হয়ে সাম্প্রতি রাজমিস্ত্রির জোগালি হিসাবে কাজ শুরু করে। আদনানের সৎ মা এবং তার বাবা তাকে নানান ভাবে নির্যাতন করতো যদি আদনানকে হত্যা করা হয় তবে তারাই করেছে। এ ঘটনা একটি নিয়ে এবং তার পরিবারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। স্থানীয় কুচুক্রি কিছু লোকের পরামর্শে তাকে হয়রানি এবং ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করার জন্য তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে তার প্রাক্তণ স্বামী।
নিহত আদনানের নানা সোলাইমান মাঝি জানান, পানিতে ডুবে আদনানের মৃত্যু হয়েছে স্থানীয় অসংখ্য মানুষ তার সাক্ষী। তার প্রাক্তন জামাই আলমগীর হোসেন গজারিয়া থানাতে প্রথম একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মেনে নেন তবে পরে কারো মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে আদালত একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাতে তিনি নিজেও আসামী। শুধু মামলা করে খান্ত হয়নি আলমগীর তার গরু বাছুর ও বাড়ির মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন প্রকাশ্যে। আলমগীরের দায়ের করা মামলায় তার পুরো পরিবার পলাতক। মামলাটি মিথ্যা দায়ের করে এ থেকে পরিত্রানের জন্য প্রশাসনের উপর মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
তবে মামলার বাদী নিহত আদনানের বাবা আলমগীর হোসেনের ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি থানাতে ন্যায্য বিচার পাবেন না সেজন্য আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার সঠিক দাবি করে তিনি বলেন, আমি কাউকে হয়রানি করছি না ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার এসআই মোঃ হেলাল উদ্দিন জানান, লাশটি ভেসে ওঠার পরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে সেটিকে উদ্ধার করেন। লাশটি অর্ধ গলিত হওয়ায় সঠিক অবস্থা নির্ণয় করা কঠিন। প্রাথমিকভাবে তাদের মনে হয়েছে গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন নাই। মৃত্যুর কারণের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে কিছু বলার জন্য হওয়ার জন্য লাশটি ময়না তদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসার পরে সঠিক কারণ জানা যাবে।