পঙ্গু হাসপাতালের লিফটের নিচ থেকে বৃধ্দ মফিজুর রহমান মফিজের লাশ উদ্ধার ঘটনায় আসামি অজ্ঞাত করে মামলা হয়েছে। ৩ এপ্রিল বিকেলে বৃদ্ধের ছেলে সোয়েব উদ্দিন মামলাটি করেছেন থানায়।এদিকে ঘটনার ছায়া তদন্তে নেমেছে যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি। লিফটের যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল কি না সে ব্যাপারে টেকনিশিয়ান তদন্ত শুরু হয়েছে। লাশ উদ্ধারের দিন ২ এপ্রিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক ১০ জনকে ৩ এপ্রিল মুক্তি দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রের তথ্যানুয়ায়ী, ৩১ এপ্রিল ঝিনাইদহর কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের ভূষিমাল ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান মফিজ পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার ৯০ বছর বয়সী মা আছিয়া বেগমের চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে আসেন। হাসপাতালের সপ্তম তলায় মাকে দেখে নিচে আসেন হাসপাতালের ফার্মেসিতে ওষুধের বিল পরিশোধের জন্য। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষে ওই দিনই থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। ডায়েরি করার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম মফিজুরের খোঁজে অভিযান পরিচালনা করেন। একপর্যায়ে পুলিশ ২ এপ্রিল দুপুর ১ টায় পঙ্গু হাসপাতালের লিফটের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে মফিজুরের লাশ উদ্ধার করে। এ সময় মফিজুরের গলার নিচে বুকে ও ডান পায়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়ায় এটাকে প্রাথমিক ভাবে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দাবি করে পুলিশ। থানা পুলিশের কয়েকটি টিম, ডিবি, সিআইডি র্যাব প্রাথমিক তদন্ত ও আটক অভিযান পরিচালনা করে। লাশ উদ্ধারের এক দিন পর ৩ এপ্রিল বিকেল ৪ টায় ভুক্তভোগী বৃদ্ধের ছেলে সোয়েব উদ্দিন আসামি অজ্ঞাত করে মামলা করেছেন। পুলিশ পঙ্গু হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের উপর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়া মফিজুরের এলাকার কেউ পিছু অনসরণ করে যশোরে এসে হত্যাকান্ড ঘটালো কিনা তা খোঁজ নিচ্ছে।
এ ব্যাপারে চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আকিকুল ইসলাম আকিক জানিয়েছেন, এজাহার দিয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে। তদন্ত চলছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত অনেক প্রশ্ন হয়তো থেকে যাবে। তবে কি কারণে হত্যা হতে পারে, কারা করতে পারে সেসব দিক নিয়ে তদন্ত এগুচ্ছে।
এদিকে, ঘটনার ব্যাপারে যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখার আইটি এক্সপার্ট অফিসার মফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে ডিবি। হত্যাকান্ড ধারণা করার আগে আমাদের পরিস্কার হতে হবে লিফটের কোনো ত্রুটি ছিল কি না। এ ব্যাপারে ঢাকা হেড অফিসে কথা বলা হয়েছে। দেশে লিফটে এ ধরণের আরো কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। লিফটের সেন্সর ত্রুটি ঘটতে পারে। লিফটের দুটি দরজা থাকে একটি আঊট, অপরটি ইন। ত্রুটি থাকলে অনেক সময় তলা ফাঁকা হয়ে দরজা খুলতে পারে। ওই সময় শুন্যে পা দিয়ে নিচে পড়ে যেতে পারেন যে কেউ। আর ৭ তলা থেকে পড়লে পা ভাঙা স্বাভাবিক। পরিবারের লোকজনের দাবি ও লাশের ধরণ দেখে হত্যাকান্ড মনে হলেও যান্ত্রিক ত্রুটি আমলে নিয়ে টেকনিশিয়ান তদন্ত করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, হত্যাকান্ড ঘটানোর পেছনে লাভ লোকসানের হিসেব থাকে। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপর নজরদারিও রয়েছে। এ ছাড়া লাশের পকেটে ২০ হাজার আটশ টাকা, একটি মোবাইল পাওয়াতে সরাসরি হত্যাকান্ড আমলে না নিয়ে লিফটের বিষয়টিও সামনে আসছে।
যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, মামলায় আসামি অজ্ঞাত করেছেন মৃত্যের পরিবার। লাশ উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক ১০ জনকে ৩ এপ্রিল ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ঘটনায় যারাই জড়িত পুলিশ তাদের খুঁজে বের করবে। এ ছাড়া জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবিও এই ঘটনাটি নিয়ে কাজ করছে।
এ ব্যাপারে পঙ্গু হাসপাতালের সত্বাধিকারী ডাক্তার এএইচএম আবদুর রউফ জানিয়েছেন, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তার প্রতিষ্ঠানে অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। প্রকৃত ঘটনা তিনিও জানতে চান। এ ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না তিনি। জীবন বাঁচানোর চেষ্টার পেশায় আছেন তিনি। যথাযথ তদন্ত দাবি করে তিনি জানান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যে কোনো ধরনের সহায়তা দিতে তিনি আন্তরিক।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী পঙ্গু হাসপাতাল থেকে ৩ এপ্রিল বিকেল ৫ টায় নতুন করে দুইজনকে আটক করে নিয়ে গেছে একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।