বাড়ি জুড়ে চলছে কান্নাকটি। আত্মীয়স্বজনেরাও যে আসছেন সকলেই কাঁদছেন। আহাজারিতে বাদ নেই প্রতিবেশীরাও। এমন শোকের মাতমের মধ্যে অবুঝ শিশু দেড় বছরের মেহেদি দাদার কোলে বসে শুধু ভীড়ের মানুষের দিকে ফ্যালফেলিয়ে চেয়ে থাকছে। স্বজন ও গ্রামবাসীদের আহাজারিতে বাতাস হয়ে উঠেছে ভারি। প্রিয় মানুষকে হারিয়ে সবাই যখন শোকে কাতর। অবুঝ মেহেদী জানে না যে, তার বাবা আর পৃথিবীতে নেই। কোনদিনও আর ফিরে আসবে না। বাবার লাশ পড়ে আছে। মানুষ আসছে বাবাকে দেখতে। কান্নারত দাদা মেহেদীকে কোলে করে বাড়ির একপাশে। আর কিছুই বুঝতে পারছে না অবুঝ মেহেদী।
সোমবার সকালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নলভাঙ্গা গ্রামের একটি খাল থেকে পীর আলী (৩৩) নামে দুই মামলার স্বাক্ষীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সে ওই গ্রামের দুটি স্পর্শকাতর মামলার প্রধান স্বাক্ষী ছিল। নিহত পীর আলী নলভাঙ্গা গ্রামের সামছুল হকের ছেলে ও ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও সে গত ২৮ নভেম্বর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড থেকে ফুটবল প্রতিক নিয়ে মেম্বার পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন পীর আলী।
পীর আলী দুটি মামলার স্বাক্ষী। বিভিন্ন সময় আসামিরা তাকে প্রাননাশের হুমকি দিত। নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত ৪ ডিসেম্বর জিডি করেছিলেন পীর আলী। কিন্তু এক মাস ২০ দিনের মাথায় খাল থেকে পীর আলীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অনেকের ধারনা তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে এভাবে গলায় রশি দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে।
পীর আলীর স্ত্রী জোসনা খাতুন জানান, সাংসারে কোন গোলযোগ ছিল না। সে কারও ক্ষতিও করেনি। প্রতিদিন সে রাতে পেয়ারা বাগান পাহারা দিতে যায় আবার রাতেই ফিরে আসে। সোমবার রাতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। সকালে খালের পাড়ে তার লাশ পাওয়া গেছে। এখন অবুঝ ২ শিশুকে নিয়ে কোথায় যাবো বলতে বলতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।
নিহত পীর আলীর ছেলে দেড় বছরের মেহেদী ছাড়াও তার ৫ বছরের একটি বোন রয়েছে। বোনটা বুঝতে পারছে তার বাবা আর নেই। কিন্তু মেহেদীর বোঝার বয়স এখনও হয়নি। অবুঝ এ শিশু দুটির মাথার ওপর থেকে বাবা নামের ছাতাটা আজ হারিয়ে গেলো। এখন আর কোথায় গিয়ে তাড়াবে। কি হবে তাদের ভবিষৎ। স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যরা কিভাবে চলবে এ ভাবনায় কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না।
নিহত পীর আলী বাবা সামছুল ইসলাম জানান,আমার ছেলে কারও ক্ষতি করিনি। কারা এমন ক্ষতি করলো আমার। আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। সাংসারিক তেমন কোন বিষয় নেই যে সে আত্মহত্যা করবে। আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।