কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুন মাষকলাই চাষ হয়েছে এ বছর। মাষকলাই চাষে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। উপজেলার কেদার, বল্লভেরখাষ, কচাকাটা, নারায়ণপুর, কালিগঞ্জ, নুনখাওয়া, বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দুধকুমার, গঙ্গাধর ও ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে চাষ হয়েছে ডাল জাতীয় এই কালাই। মাঠের পর মাঠ ভরে গেছে মাষকলাইয়ের সবুজ পাতায়। ইতোমধ্যে অধিকাংশ ক্ষেতের কলাইয়ের শীম এসেছে। পরে বপন করা ক্ষেত গুলোর কলাই গাছে ফুটেছে ফুল। গতবার কলাই গাছ ছত্রাকে সংক্রমিত হলেও এবার ছত্রাকের প্রভাব পড়ে নাই। অন্যান্য রোগ বালাই একেবারে নাই।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে এবার উপজেলায় মাষকলাই চাষ হয়েছে ২’শ ৭৫ হেক্টর জমিতে। মাষকলাই চাষে কৃষি দপ্তরের লক্ষমাত্রা নির্ধারিত ছিলো ১’শ ২০ হেক্টর জমি। হিসেব অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১’শ ৫৫ বেশি জমিতে চাষ হয়েছে ডাল জাতীয় এ ফসল। বন্যায় ক্ষতি হওয়া চরাঞ্চলের আমন ক্ষেত, পতিত জমিতে ব্যাপকভাবে মাষকলাই চাষ হওয়ায় আবাদি জমির পরিমান বেড়েছে বলে ধারণা উপজেলা কৃষি দপ্তরের।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এসব মাষকলাইয়ের আবাদও ভালো হয়েছে। মাঠ ভরা সবুজ সতেজ গাছ দেখে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। আশানুরূপ ফলন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন কৃষকরা।
কচাকাটা ইউনিয়নের চর শৌলমারী এলাকার কৃষক আবদুল মালেক জানান, বন্যায় নষ্ট হওয়া ৫ বিঘা আমন ক্ষেতে মাষকলাই চাষ করেছেন তিনি। বীজ, হালচাষ,সার সবমিলে বিঘে প্রতি ১২শ টাকা খরচ হয়েছে তার। কাটা মারাইসহ বিঘে প্রতি আরোও ১৫শ থেকে ১৮শ টাকা খরচ হবে। ফলন ভালো হলে বিগে প্রতি ৫ থেকে ৬মণ কলাই পাবেন তিনি। প্রতিমণ কলাই ১৬শ থেকে ১৮’শ টাকা বিক্রি করতে পারবেন। কলাই বিক্রি করে আমনের কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন তিনি। একই ইউনিয়নের তরিরহাট এলাকার কৃষক ফরিদুল ইসলাম জানান, কম খরচে বেশি লাভ পাওয়া যায় বলে সবাই মাষকলাই চাষে ঝুকছে। বিশেষ করে পতিত জমিতে নাম মাত্র হালচাষে এ কলাই বপণ করা যায়।
কালিগঞ্জ ইউনিয়নের কমেদপুর এলাকার কৃষক আল মামুন জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নিচু চরাঞ্চলে আর কোন ফসল চাষের সময় থাকে না। তাই বিভিন্ন প্রকার ডাল জাতীয় ফসল আবাদ করা হয়। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে মাষকলাই,মসুর, খেষারী,মুগ,শুলটি ও মটর। এবার উপজেলায় মাষকলাইয়ের পাশাপাশি মসুর ১’শ ৯৫ হেক্টর, খেষারী ১’শ ৫০ হেক্টর, মুগ ১’শ ৩৫ হেক্টর, শুল্টি ১০ হেক্টর ও মটর ৬ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলা কৃষি অফিসার শাহরিয়ার হোসেন জানান, এবার উপজেলায় ডাল চাষের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে মাষকলাই বেশি চাষ হয়েছে। আবাদের লক্ষণও ভালো দেখা যাচ্ছে। আশানরুপ ফলন পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা করছি।