কিশোরগঞ্জের আমিনুল হক সাদী যুব সংগঠক হিসেবে অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। জানা গেছে যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদী ২০০৪ সালে কিশোরগঞ্জ যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে গবাদী পশু, হাঁস মুরগী, মৎস্য চাষ, গরু মোটাতাজা করণ, কৃষি বিষয়ক ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের দিকে উদ্বুদ্ধ হন। প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান বাস্তবে কাজে লাগিয়ে যুব সংগঠক হিসেবে মনোনিবেশ করেন।
গুরুদয়াল সরকারী কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে মাস্টার্স পড়াশোনার পাশাপাশি যুব সংগঠক সাদী সরকারী চাকুরীর দিকে না থাকিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে প্রথম ধাপে ৬০ হাজার টাকার ঝণ নিয়ে “ সাদী সমন্বিত কৃষি খামার’ গড়ে তোলেন। এই খামারের উদ্যোগে পুকুরে মৎস্য চাষ, নিজস্ব জমিতে কৃষি ফসলি ও বনায়ন নার্সারী তৈরী করেন। এছাড়াও শাক সবজি আবাদ করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠেন। সাদীর সবচে বড় সফলতা হলো একজন সফল যুব সংগঠক হিসেবে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকার বেকার যুব সম্প্রদায়কে “যুব উন্নয়ন পরিষদের” ছায়াতলে সংগঠিত করে বিভিন্ন অফিস আদালতের মাধ্যমে বিশেষ করে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে সফল আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তোলেছেন ২ শতাধিক যুবককে। অনেকেই প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে যুব উন্নয়ন হতে ঝণ নিয়ে আজ সফলতার চুড়ান্ত শিকড়ে আরোহিত হয়েছেন। বেকার জনগোষ্ঠীকে নিয়ে ২০১০ সালে গড়ে তোলেন “যুব উন্নয়ন পরিষদ’ নামে একটি যুব সংগঠন। এ সংগঠনটির মাধ্যমে বেকার জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। এ সংগঠনের মাধ্যমে এলাকার দারিদ্র বেকার জনগোষ্ঠীর প্রায় ২ হাজার যুব ও যুব নারীকে বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলেন। করোনাকালে সংগঠনের উদ্যোগে মাস্ক স্যানিটাইজার ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। দারিদ্রদেরকে আর্থিক সহায়তাসহ প্রশংসনীয় কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এছাড়াও ২০০৬ সালে গড়ে তোলেন মহিনন্দ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদ নামে আরও একটি সংগঠন। এ সংগঠনটির মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবামুলক কর্মকা-ে বিপুলভাবে প্রশংসিত হন এবং নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১১ সালে গড়ে তোলেন মহিনন্দ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ পাঠাগার নামে একটি প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে গ্রামীন জনগোষ্ঠী জ্ঞান বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। চতুর্দিকে আলোর বিকিরণ ছড়িয়ে দিচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালে গড়ে তোলেন কিশোরগঞ্জ আরকিওলজিক্যাল সোসাইটি নামে আরও একটি সংগঠন। যেটির মাধ্যমে জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তির উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের সদস্যরাও সমাজে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠান সমূহের নিবন্ধন দিয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর ও গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর সাদীর কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারিত করার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রশংসনীয় কার্যক্রমে পেয়েছেন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শতাধিক সম্মাননা সনদ ও পুরস্কার।
সংগঠক আমিনুল হক সাদীর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন মূলত যেসব বিষয়ে কাজ করে থাকে তা হলো যুব নেতৃত্ব বিকাশে ভূমিকা, জীবন দক্ষতামুলক কার্যক্রম, নিরক্ষরতা দূরীকরণ,কারিগরি প্রশিক্ষন ও প্রযুক্তি উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের নতুনক্ষেত্র উদ্ভাবন, প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহারের প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষ রোপন এবং পরিবেশ দূষন রোধে অবদান, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা, স্থানীয় সরকারের সাথে আইনশৃঙলা উন্নয়নে কর্মকান্ড, ধূমপান ও মাধকবিরোধী প্রয়াস, সন্ত্রাস ও অন্যন্য সমাজবিরোধী কর্মকা- প্রতিরোধ কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য, এসটিডি এইডস সচেতনতা, স্যানিটেশন কার্যক্রমে অবদান, বায়োগ্যাস প্রকল্পে উদ্বুদ্ধকরণ, পরিষ্কার পচ্ছিন্নতা কার্যক্রম, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় অংশ গ্রহণ, বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ যৌতুক বিরোধী আন্দোলন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড,সমাজ উন্নয়নমুলক কাজে অবদান, দেশীয় সম্পদের সদ্ব্যবহার, নিজস্ব শ্রম ও মেধার প্রয়োগে নেতৃত্ব বিকশিত করে যাচ্ছেন।
মহিনন্দ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মনসুর আলী বলেন, বহু প্রতিভাধর যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদীর কৃতিত্বের জন্য তাকে পরিষদের পক্ষ হতে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠিত যুব সংগঠনসহ অন্যন্য প্রতিষ্ঠান এতদাঞ্চলের বেকার জনগোষ্ঠীর আত্মসামাজিক উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রেখে যাচ্ছে। এই প্রতিভাধর সংগঠককে জাতীয়ভাবে পুরস্কার দেওয়া হলে আরও উৎসাহিত হতো।
জাতীয় যুব পদক ২০২০ প্রাপ্ত শিবলী সাদিক নোমান বলেন, ২০১৮ সালে সাদী ভাইয়ের যুব সংগঠনের সহায়তায় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলাম। প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আমি নিজেও মৎস্য ডেইরি ও পোল্ট্রি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করি। যেটি জেলা প্রশাসন ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করে আমাকে জাতীয় যুব পদকে ভূষিত করে।
কিশোরগঞ্জ সদরের মহিনন্দের বাসিন্দা শ্রেষ্ঠ সফল আত্মকর্মী জাতীয় যুব পদক ২০১৩ প্রাপ্ত নুরুল আরেফিন লিংকন বলেন, যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদী আমার ফার্ম নিয়ে অনেক প্রতিবেদন তৈরী করে এলাকার বেকার যুবদের মধ্যে পোল্ট্রি শিল্পের প্রসারে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত যুব সংগঠনের প্রশিক্ষিত সদস্যরা আমার ফার্মে এসে মাঠ কর্ম বাস্তবায়ন করে তারা নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। দক্ষ যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদীকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা এখন সময়ের দাবী।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জেড এ সাহাদাৎ হোসেন বলেন, যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদীর প্রতিষ্ঠিত যুব উন্নয়ন পরিষদকে আমরা নিবন্ধন দিয়েছি। তার সংগঠনের উদ্যোগে জাতীয় যুব দিবসসহ বিভিন্ন প্রশংসনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
কিশোরগঞ্জ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফারজানা পারভীন বলেন, যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদীর প্রতিষ্ঠিত যুব উন্নয়ন পরিষদ নামের সংগঠনটি একাধিকবার পরিদর্শনে গিয়েছি। এবারে তার সংগঠন জাতীয় যুব পুরস্কারের জন্য অংশ নিয়েছিলো। জেলা পর্যায়ে গত আগস্ট মাসের ৯ তারিখে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে জাতীয় যুব পুরস্কার মনোনয়ন কমিটি কিশোরগঞ্জ এর সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম ও সদস্য সচিব হিসেবে আমিসহ কমিটির সকল সদস্যগণ জাতীয় যুব পুরস্কার সংশোধীত নীতিমালা ২০২১ অনুযায়ী সাদীকে যুব সংগঠক হিসেবে মনোনীত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন প্রেরণ করা হয়েছিলো। এবারে কিশোরগঞ্জের নারী উদ্যোক্তা হিসেবে রীমা আক্তার পুরস্কার পাচ্ছে।
যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদী বলেন,আমার পথচলাটা ছিলো খুবই কঠিন পরিস্থিতিতে। সংগঠন পরিচালনা করতে গিয়ে নানা প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করতে হয়েছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে যাদের সহায়তা পেয়েছি তারা হলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক মোঃ রোকন উদ্দিন ভূঞা, বর্তমান উপপরিচালক ফারজানা পারভীন, সহকারী পরিচালক তাহসীনা নাজনীন, সদর উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জেড এ সাহাদাৎ হোসেন, সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ সিদ্দিকুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ব্যক্তিবর্গ।
আমিনুল হক সাদী কিশোরগঞ্জ তথা স্থানীয় বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের কাছে একজন অনুপ্রেরণার নাম। সাদীর সার্বিক সফলতা কামনা করেছেন সচেতন কিশোরগঞ্জবাসী।