পৃথিবী নামক এই ছোট গ্রহটির সবচেয়ে বড় হুমকি হলো উষ্ণতা বৃদ্ধি। গ্রিন হাউজ ইফেক্টের তীব্রতার কারণে ওজন স্তর ক্ষয়ে যাচ্ছে মারাত্মকভাবে। ফলে অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব যেমন বাড়ছে, তেমন বৈশ্বিক উষ্ণতাও ক্রমেই বাড়ছে। দ্রুত বদলে যাচ্ছে বিশ্বের জলবায়ু। উষ্ণতার মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধিতে ক্রমেই বেশি করে গলছে মেরু অঞ্চলের বরফ। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক দেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। বহু মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দ্বীপদেশ মালদ্বীপের সমুদ্রের তলে ডুবে যাওয়ার আশংকায় রয়েছে। এজন্য তারা কয়েক বছর আগে সমুদ্রের তলদেশে মিটিংয়ের আয়োজন করে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির অভিনব প্রতিবাদ প্রকাশ করে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে ধরিত্রী সম্মেলন থেকে শুরু করে অসংখ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের প্রচেষ্টার পাশাপাশি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রচেষ্টারও অন্ত নেই, যদিও শিল্পোন্নত দেশগুলোর একরোখা আচরণের কারণে কার্বন নিঃসরণের হার কমানোর ক্ষেত্রে একমত হতে পারেন না নেতৃবৃন্দ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধের জন্য সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন। গত শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে আয়োজিত ‘জলবায়ু ও জ¦ালানি বিষয়ে বড় অর্থনীতিগুলোর ফোরাম’ শীর্ষক এই সম্মেলনে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী প্রজন্মের টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অংশীদারির ভিত্তিতে সব অংশীজনের সঙ্গে কাজ করার জন্য বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ঠেকাতে না পারলে মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যে কঠিন হয়ে পড়বে এ ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। বিশ্বের জ্ঞানীগুণী বিজ্ঞানীরাও এই ধারণ পোষণ করেন, এবং এজন্য তাঁরা অনেক দিন ধরেই কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর নির্গমন কমানোর কথা বলে আসছেন। মূলত গ্রিনহাউস গ্যাসের বেশির ভাগই নির্গমন হয় উন্নত দেশগুলো থেকে। এর আগে বিভিন্ন ফোরামে উন্নত দেশগুলো কার্বন নির্গমন কমানোসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নানা পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছিল। কিন্তু বাস্তবে সেসব প্রতিশ্রুতিও যথাযথভাবে রক্ষিত হচ্ছে না।
এমন প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটনে বাইডেন আয়োজিত সম্মেলনে বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী ছয় দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে আছেÍ১. বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখার লক্ষ্যে কার্বন নির্গমনকারী প্রধান দেশগুলোকে তাদের কার্বন নির্গমন কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ২. জলবায়ু তহবিলের জন্য উন্নত দেশগুলো বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণ করতে হবে এবং অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ৫০ঃ৫০ অনুপাতে বিতরণ করতে হবে। ৩. উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তি হস্তান্তরের পাশাপাশি সবচেয়ে কার্যকর জ¦ালানি সমাধান নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ৪. নবায়নযোগ্য জ¦ালানির ব্যবহার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জাতিরাষ্ট্রগুলোর সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলোর হিসাব নেওয়া এবং তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লোকসান ও ক্ষতির দিকগুলো বিবেচনা করা উচিত। ৫. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা ও খরার কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষকে পুনর্বাসনের দায়িত্ব সব দেশের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া প্রয়োজন। এবং ৬. আগামী নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় কপ২৬ সম্মেলন থেকে দৃঢ় ও তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল পেতে বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
একটি বিষয় পরিস্কার যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে। বন্যা, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড় উপকূলীয় মানুষের অস্তিত্বের সাথে লেপ্টে আছে। বহু মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় চলে যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, সমস্যা তত প্রকট হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর উচিত বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র দেওয়া ছয় দফা প্রস্তাব বিশ্ব নেতৃবৃন্দ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেনÍএটাই এ দেশবাসীর প্রত্যাশা।