রংপুরের পীরগঞ্জে আশানুরুপ বাজার মুল্য না থাকায় বেশ কয়েক বছর আগেই দেশের সোনালি আঁশ খ্যাত পাট তার অতীত ঐতিহ্য হারিয়েছিল। সময়ের বিবর্তনে পাটের কদর বেড়ে যাওয়ায় কৃষক বাজার মুল্য পাচ্ছে আশানুরুপ। ফলে পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের। বিগত বছরের তুলনায় চলতি মওসুমে পাট চাষ বেড়েছে গোটা উপজেলায়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাটচাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আশা-নিরাশার দোলাচলে প্রতিবছর লাভ-ক্ষতির হিসাব না করেই পাটচাষ করেন উপজেলার কয়েক শতশত কৃষক। শুরু থেকে উৎপাদন খরচ বেশি ও পাটগাছ থেকে আঁশ ছাড়ানোর শ্রমিক সংকটের মধ্যে কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় হতাশ ছিলো তারা। বর্তমানে পাটের বাজার দর বৃদ্ধিতে আশাতীত মুল্য পেয়ে খুশি উপজেলার পাট চাষীরা। পীরগঞ্জ উপজেলা পাট কর্মকর্তা চায়না খাতুন বলেন, সোনালী আঁশ খ্যাত পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ ফিরে আনতে গত বছর ২ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামুল্যে সার ও বীজ প্রদান করা হয়। চলতি বছর কৃষকের আগ্রহ এবং উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ২ হাজার ৯শ’ কৃষকের মাঝে সার ও বীজ প্রদান করা হয়েছে। এ মওসুমে পাটের ভালো ফলন ও মুল্য পাওয়ায় লাভবান হয়েছেন কৃষকরা। বাজারদর এরকম থাকলে পাট চাষে আরও আগ্রহী হবেন অনেকেই। কৃষি কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে কৃষকদের প্রশিক্ষনও দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি মন (৪০ কেজি) পাট ২ হাজার ৮শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন চাষীরা। পাট চাষী কিশোরগাড়ীর হবিবর, লালচান পুরের আসাদুল,রামপুরার আলী আসগর ,সোললায়মান আলী, রওশনপুরের মোকসেদ আলী সরকার জানান, পাট চাষের শুরুতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবারে পাটগাছ লম্বা হতে দেরি হয়েছে। পরে বৃষ্টি হওয়াতে শুধু পাট গাছ বড় হয়েছে। আঁশ তেমন মোটা না হওয়ায় ফলন একটু কম হয়েছে। তবে দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হয়েছি। এরকম বাজার থাকলে আগামীতেও পাট চাষ অব্যাহত থাকবে। উপজেলার ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের পাট চাষী আব্দুল মালেক জানান, গত বছরে প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে, ১৫’শ থেকে ১৬’শ টাকা। প্রতি একরে ফলন হয়েছে ১৬ থেকে ২২ মন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় প্রায় ২ হাজার ৩’শ হেক্টর জমিতে তোষা এবং দেশী পাট চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৮শত মেট্রিক টন। পাট একটি পরিবেশবান্ধব অর্থকরী ফসল এবং পাটের বহুবিধ ব্যবহারের ফলে বিশ্ববাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষক পাটের ভাল মুল্য পাওয়া যাচ্ছে। ফলে নতুন অনেকেই পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।