দেশের মাটিতে এবার উৎপাদন তালিকায় যোগ হয়েছে বিদেশি ফল অ্যাভোকাডো। পৃথিবীর পুষ্টিকর ফল গুলোর মধ্যে অন্যতম এই ফলের আছে ওষুধি গুনাগুন। বাজারে ভালো দাম ও চাহিদা থাকায় এই ফলের বাণিজ্যিক উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন এক স্কুল শিক্ষক। সে লক্ষে ঝিনাইদহ কোটচাদপুুর উপজেলার কাগমারি গ্রামের হারুন আর রশিদ মুুসা অ্যাভোকাডো ফলের চাষ করেছেন। তিনি ৬ বিঘা জমিতে এই প্রথম চাষ করে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
শিক্ষক মুসা বলেন, আমেরিকা থেকে আসা এই ফলটি স্বাদে ও পুষ্টিগুণ রয়েছে অন্যতম এর চাষ পদ্ধতিও সহজ। বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় আমদানি নির্ভর এই ফল চাষের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন তিনি। ফলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়েও আশাবাদী ক্ষেত মালিক মুসা। তিনি প্রথমে বাগান করার সময় চিন্তা করছিলেন আমাদের দেশের মাটি ও আবহাওয়া এ ফলের চাষের সাথে অনুকুলে থাকবে কিনা। এক পর্যায় তিনি শত চেষ্টা চালিয়ে গত ২ বছর আগে চারা রোপন করেন। এ বছর ফল ও ফুল আসতে শুরু করেছে। তিনি বলেন বাজার মূল্য উচ্চ এবং চাহিদা ভালো থাকায় এই ফল চাষ আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে অ্যাভোকাডো ফল ২ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলটি দেশের বাইরে রয়েছে অনেক চাহিদা সে লক্ষে তিনি এ ফল বাগান করতে আগ্রহী হয়েছেন। এ ফলের কথা জানতে পেয়ে সখের বশিভুত হয়ে চারা সংগ্রহের কথা চিন্তা করেন। বাংলাদেশের অনেক স্থানে খোঁজ করে চারা সংগ্রহ করতে না পেরে অবশেষে কৃষি মন্ত্রনালয়ের সাবেক ডিজি এনামুল হক এর কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করেন। সে সময়ে প্রতিটি চারা ক্রয় করে তার বাগানে পৌছাতে প্রায় ২ হাজার টাকা ব্যায় হয়েছিল।
অ্যাভোকাডো চাষে খরচ অল্প; কিন্তু লাভ অনেক বেশি। আবহাওয়া ও মাটির গুনাগুণ অনূকুলে থাকায় এই ফল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন। এলাকায় অনেকে তার বাগানটি দেখতে আসে ও অনেকেই এ ফল বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বর্তমানে তিনি প্রতিটি চারা ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। এ ফলের আকার পেয়ারা বা নাশপাতির মতো। একেকটা ফলের ওজন প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম। ফলের ভেতরে বেশ বড় ডিম্বাকার বীজ থাকে। বিচিটি আস্ত রেখে ফালি করে কেটে খোসা ছাড়িয়ে খেতে হয়।
আহার্য্য অংশ মাখনের মত মোলায়েম; হালকা মিষ্টি স্বাদের। পেঁপের মত কাঁচা-পাকা এই ফল খাওয়ার সুবিধা আছে। স্বাদে ও পুষ্টিগুণে অনন্য এই ফল চাষ করে বাণিজ্যিক ভাবে সফল হবেন হারুন আর রশিদ এমনটাই প্রত্যাশা করছেন। পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদা পূরণেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে এই ফল। বাগানে গিয়ে দেখা যায় গাছে থোকায় থোকায় ধরে আছে অ্যাভোকাডো। গাছের চারপাশে দেখা গেছে আরও অনেক গুলো করে অ্যাভোকাডোর গাছের চারা হয়েছে। কলম চারার মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে এসব গাছ। গাছের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফল আসার পরিমাণও বাড়ছে। বর্তমানে তার ৬ বিঘা জমিতে ২৪০ টি গাছ রয়েছে। তিনি পেশায় একজন হাইস্কুল শিক্ষক। মুসা বলেন এই ফল অতি উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়।
কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাসিন আলী জানান,হারুন- অর রশীদ একজন ইনোভেটিভ কৃষক। অ্যাভোকাডো ধরনের বিদেশি ফলের আবাদ রয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে আমরা তাকে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছি। আমি নিজেই তার বাগান পরিদর্শন করেছি। এ ছাড়া কৃষি বিভাগ থেকে তাকে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষনে পাঠানো হয়। মুসার মত কৃষি উদ্যোক্তারা দেশের কৃষিক্ষেত্রে দারুন অবদান রাখছেন বলে দাবি করেন।