কৃষকের কাজ করে জীবন কাটিয়েছেন কিন্তু এখন বয়স বৃদ্ধির কারণে কিছুই করতে পারেন না। অবশেষে নিজ বাড়িতে বসেই সময় কাটাচ্ছেন বৃদ্ধ বয়সি বাবা শাহজাহান আলী আর মা খায়রুন নেছা। পরিবারে কাজ এখন তারা করতে পারেন না,যে কারণে বৃদ্ধ বয়সে সময় কাটানোর জন্য তালের হাত পাখা তৈরি করে বিভিন্ন মানুষ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, দোকান ব্যবসায়িদের বিনামুল্যে দিয়ে থাকেন বৃদ্ধ শাহাজান আলী।
বৃদ্ধ বয়সে অবসরের সময়টা পার করতে শাহজাহান আলী বেছে নিয়েছেন সখের বশিভুত হয়ে পাখা তৈরির কাজ। কিন্তু তাল পাখা বিক্রি করেন না, বিনামুল্যে প্রদান করে থাকেন। তিনি নিজবাড়িতে বসেই তালপাখা তৈরি করেন আর এলাকার মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে থাকেন। এটা শাহজাহান আলরি নেশায় পরিনত হয়েছে। বিশেষ করে এলাকার মসজিদ-মাদ্রাসায় নিজে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসেন পাখাগুলি। বাড়িতে কোনো আত্মীয়স্বজন বেড়াতে আসলে চোলৈ যাবার সময় উপহার হিসেবে হাতপাখা দিয়ে থাকেন। এভাবে পাখা মানুষের মাঝে বিতরণ করে মানষিক ভাবে অনেক আনন্দ পেয়ে থাকেন বলে জানান।
শাহজাহান আলীর (৭৫) ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের কুরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় একজন কৃষক ছিলেন তিনি, কিন্তু বয়স বেশি হবার কারণে এখন মাঠের কাজ করতে পারেন না। শাহজাহান আলী হাসি মুখে বলেন, ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করেছি,হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ছেলে মেয়েদের মানুষ করেছি। শাহজাহান আলীর ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে। সবার বিয়ে দিয়েছেন, তারা পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার জীবন করছে।
শাহজাহান আলী বলেন, গত ৫ বছর পূর্বে তাঁর ছেলেরা সংসার ভাগাভাগি করে পৃথক হয়ে যায়। মাঠের জমিসহ সবকিছু সমবন্টন করে দিয়েছেন। একই বাড়িতে পৃথক পৃথক ভাবে সবাই বসবাস করে। সংসার পৃথক করার সময় সিদ্ধান্ত হয় এখন থেকে বাবা মা আর কোন কাজ করবে না তা অবসর সময় কাটাবেন বাড়িতে বসেই। পর্যায়ক্রমে ৪ ছেলের মধ্যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খাবার খাবেন। আবার তাদের মনে ইচ্ছে হলে যে কোন ছেলের বাড়িতে খাবার খেতে পারবেন। বাবা ও মায়ের ব্যাক্তিগত কোন টাকার প্রয়োজন হলে ছেলেরা তা দিয়ে থাকেন। নিয়মিত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েন, বলরামপুর বাজারে বসেন ও মানুষের সাথে হাস্য মনোভাব নিয়ে কথা বলেন। মসজিদে বিদ্যুত চোলে গেলে কারও যেন গরমে কষ্ট করতে না হয় সে কারণে মসজিদে পাখা প্রদান করেন। আবার অনেক দোকান ব্যবসায়িদের ও পাখা প্রদান করেন বিদ্যুত চোলে গেলে তাল পাখার বাতাস খাবার জন্য। বাজার ও অনেক ব্যবসায়িদের দোকানে বসেন বিভিন্ন সময়ে, শাহজাহান আলী কাইকে যদি দেখেন গরমে কষ্ট করছেন তা হলে সঙ্গে থাকা একটি পাখা প্রদান করেন। কিন্তু কেউ টাকা দিলে নেয় না। এটা মানবিক ও সখের কারণে প্রদান করে থাকেন। নিজের ঘরে বসে তালপাখা তৈরি করেন। পাখা তৈরির অন্যান্ন খরচের টাকা ছেলেদের কাছ থেকে নিয়ে থাকেন। যে কারণে অর্থের কোন সমস্যা হয় না।