ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে এ বছর দাম ভালো থাকায় বেশি পরিমাণ পাট চাষ হয়েছে। এদিকে কয়েক বছর থেকে শ্রম দিয়ে, টাকা খরচ করে পাট চাষ করে দাম পেতেন না কালীগঞ্জের কৃষকরা। তবে পরিস্থিতি পাল্টেছে। এবার ভালো দামে বাজারে পাট বিক্রি করছেন তাঁরা। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে ভালো লাভও পাচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তাই এবার কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কালীগঞ্জ উপজেলা গুলোর কয়েকজন কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর ধরে পাটের দাম বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক আবার পাট চাষের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে পাট চাষ ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাঁরাও এ বছর অল্প করে পাট চাষে ঝুঁকেছেন।
বিগত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি পরিমাণ জমিতে পাটবীজ বপন করা হয়েছে। গত বছর থেকে আবহাওয়া ভালো থাকায় এবারও বেশি পরিমাণে পাটের বীজ বপন করেছে কৃষকরা। আবহাওয়া ভালো থাকলে পাটের বাম্পার ফলন আশা করছে কৃষকরা।
আগের চেয়ে এখন কৃষি উপকরণের পাশাপাশি দিনমজুরের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তার মধ্যে বীজ বপন থেকে পাট কেটে প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত এক বিঘা জমিতে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মত খরচ হয়। গত কয়েক বছর যাবত বাজার মন্দা থাকায় পাট বপন করে এলাকার অনেক চাষিদের লোকসান গুণতে হয়েছে। তবে গত বছর থেকে বাজারে পাটের চাহিদার পাশাপাশি দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। যার কারণে এবার অনেকেই পাট চাষে এগিয়ে আসছেন।
আগামীতে পাট চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা। কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রথমে ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা মণের পাট দাম বেড়ে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এ ছাড়া পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ বাস্তবায়নের ফলে ধান, চাল, গম, ভূট্টা, সার ও চিনির বস্তা হিসেবে বাধ্যতামূলক পাটের বস্তা ব্যবহারে তৎপর হয় সরকার। এতে করে পাটের দাম আরো বেড়ে যায়। এখন কৃষকরা চলতি মৌসুমের পাটের জমি পরিচর্যার ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমিতে সেচ দেওয়া, জমিকে আগাছা মুক্ত করা, সময় মতো সার প্রয়োগ প্রভৃতি পরিচর্যা করছেন।
উপজেলার নগর চাপরাইল গ্রামের পাট চাষি জাবের মন্ডল জানান, গত বছর মাত্র ১৮ কাঠা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম এবার পাটের দাম ভালো হওয়াতে দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। একই গ্রামের কৃষক নওশের আলী জানান, তিনি এবার ১বিঘা ১১ কাঠা জমিতে পাট চাষ করেছেন। আশা করছেন দাম ভালো পাবেন। ষাটবাড়িয়া গ্রামের পাট চাষি কবিরুল ইসলাম নান্নু জানান, গতবছর আমি পাট চাষ করিনি কিন্তু এবার পাটের দাম বেশি হওয়াতে ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি।
কালীগঞ্জ উপজেলায় রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় আমরা ২৫জন কৃষকের প্রদর্শনী দিয়েছি। প্রত্যেক কৃষককে সার, বীজ, ও ক্ষেত পরিচর্যার জন্য ২৫শ করে টাকা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এলাকায় প্রয়োজন ৩৪ জন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সেখানে মাত্র ১২জন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। জনবল কম থাকার কারণে সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতে পারে না। তবে কৃষক মাঠ স্কুল থেকে আমরা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও ফসলের রোগ বালাই সম্পর্কে সচেতন করে থাকি। মাঠ দিবসেও আমরা কৃষকদের সাথে তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা আলোচনা করে থাকি।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মোঃ মোহায়মেন আক্তার জানান, গতদুই বছরের তুলনায় এবার পাটের চাষ অনেক বেশি হয়েছে। ১৮-১৯ অর্থ বছরে পাট চাষ হয়েছিলো ১৩শ ৪০ হেক্টর, ১৯-২০ অর্থ বছরে পাট চাষ হয় ১৫শ হেক্টর, সে তুলনায় ২০-২১ অর্থ বছরে পাট চাষ বেড়ে দাড়ায় ১৮শ ১৯ হেক্টর। পাটের দাম ভালো পাওয়াতে কৃষকদের পাট চাষের দিকে আগ্রহ বাড়ছে বেশি।