পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে শুরু হয়েছে পদ্মা নদীর ডান তীরে ভাঙ্গন। ফরিদপুর সদর উপজেলার পদ্মা নদীর নিকটবর্তী নর্থচ্যানেল ও ডিক্রিরচর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ভাঙ্গন শুরু হওয়ায়, দুই ইউনিয়নের হাজারো পরিবার ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। পদ্মা নদীর ভাঙ্গণ রোধে পদ্মার বাম তীরে জেগেউঠা চর ড্রেজিং করে পদ্মা নদীর পানির গতিপথ পরিবর্তনের দাবীতে গণস্বাক্ষরসহ লিখিত আবেদন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বরাবর। আর কর্তৃপক্ষ বলছেন পদ্মা নদীর বাম তীরে জেগেউঠা চর অপসারনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার অবহেলিত জনপদের নাম নর্থচ্যানেল ও ডিক্রিরচর ইউনিয়ন। দুটি ইউনিয়নই পদ্মানদীর তীরবর্তী হওয়ায় পদ্মা নদীতে একটু পানি বৃদ্ধিপেলেই শুরু হয় নদী ভাঙ্গণ। বিগত গত ৬/৭ বছর ধরে ইউনিয়ন দুটি ১০-১২টি গ্রামের কয়েক হাজার হেক্টোর ফসলী জমি, বসত বাড়ি পদ্মা নদীর গর্ভে বিলিন হয়েগেছে। নদী ভাঙতে ভাঙতে নর্থচ্যানেল ও ডিক্রিরচর ইউনিয়নের সীমানায় অবস্থিত শহর রক্ষাবাঁধ ও গোলডাঙ্গী ব্রীজ থেকে ১০০ মিটার দুরে অবস্থান করছে পদ্মানদী ডান তীর। আর বাম তীরে জেগে উঠেছে একটি বিশাল চর। এলাকাবাসী ভাঙ্গণ রোধে নদীর বাম তীরে জেগে উঠা চর ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের দাবীতে কয়েক হাজার মানুষ গণস্বাক্ষর দিয়ে পানি উন্ন্য়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করেছেন।
চলতি মৌসুমে নর্থচ্যানেল ও ডিক্রিরচর ইউনিয়নের শুকুর আলী মৃধা, ইউসুফ মাতুব্বর, ছলিম বিশ্বাসের ডাঙ্গী, কাইমউদ্দিন মাতুব্বরের, আইজদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী, তাইজউদ্দিন মুন্সীে ডাঙ্গা, বাছের মোল্যার ডাঙ্গীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন চলছে। এভাবে ভাঙ্গন অব্যহত থাকলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পদ্মা নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে গোলডাঙ্গী ব্রীজ, শহর রক্ষা বাঁধ, কয়েকটি মসজিদ-মাদ্রাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাই স্কুল, আশ্রয় কেন্দ্রসহ কয়েক হাজার হেক্টোর ফসলী জমি ও হাজারহাজার পরিবার। আর সে কারনেই দুই ইউনিয়নের জনগন ভাঙ্গন রোধে দ্রুত চর অপসরনের দাবী জানিয়েছেন।
নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ইয়াকুর মৃধা বলেন, অনেক বার নদীতে আমাদের বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে গেছে। এখন আর আমাদের যাওয়ার যায়গা নেই। ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন পার করছি আমরা। আমরা চাই ভাঙ্গন রোধে নদীর বাম তীরে যে চর জেগে উঠেছে, ঐ চর কেটে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে দিলে, আমরা ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবো। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই শুরু হয়ে গেছে নদী ভাঙ্গণ। সরকারের কাছে আমাদের একটাই চাওয়া নদী ভাঙ্গন রোধে এখনই যেন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান মোস্তাক বলেন, পদ্মায় জোয়ার আশায় নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। নদী ভাঙ্গন অব্যহত থাকলে যে কোন সময় গোলডাঙ্গী ব্রীজ, শহর রক্ষা বাঁধ, স্কুল, মসজিদ-মাদ্রাসা, আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনাসহ কয়েক হাজার বাড়িঘর ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাবে।
ডিক্রিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু জানান, বর্ষা মৌসুম আশার আগেই নদী ভাঙ্গন শুরু হয়ে গেছে। পদ্মার পাড় থেকে মাত্র ১০০ফুট দুরে অবস্থান করছে শহর রক্ষা বাঁধ ও গোলডাঙ্গী ব্রীজ। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত নদীর বাম তীরের চর কেটে নদীর পানি গতি পথ পরিবর্তন করা না হলে, ডিক্রিরচর ও নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের বড় একটি অংশ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাবে। দ্রুত তমো সময়ে পদ্মা নদীর বাম তীরের চর কেটে গতি পরিবর্তন করে দিলেই আমরা ভাঙ্গণের হাত থেকে রক্ষা পাবো।
ফরিদপুর পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, ভাঙ্গণ কবলিত এলাকা আমরা কয়েক বার পরিদর্শন করেছি। পদ্মার বামতীরে যে বিশাল চর জেগেছে এটা অপসরণ জরুরী। অপসরনের জন্য একটি কারিগরি প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করি যে কোন উদ্যোগেই হোক না কেন, এই চরটিকে অপসারণ করতে পারলে, যেমন পদ্মার ডান তীরে ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে। একই সাথে ঐ এলাকাটা বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে।