ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ ঢাকা খুলনা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত পৌর শহরের বলিদাপাড়ায় অবস্থিত দেশের দক্ষিণের অন্যতম ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান মোবারকগঞ্জ চিনিকল। এ মিলের শ্রমিক কর্মচারী দির্ঘদিন ৭ বছর ধোরে জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ ভবণে বসবাস করছে। ১৯৬৫ সালে নির্মিত এ মিলের শ্রমিকদের বসবাসের জন্য ই-টাইপের তিনটি ভবন রয়েছে। এসব তিনতলা, এফ টাইপের তিনটি তিনতলা এবং এফ টাইপের একটি একতলা ভবন তৈরি করে। এসব ভবণে ৯০ জন শ্রমিক বসবাস করছে। এর মধ্যে ২নং ভবনটি একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ৭ বছর আগে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে। পরিত্যাক্ত ঘোষণার পর ওই ভবণে এখনো ১৮ শ্রমিক বসবাস করছে। যদিও বসবাসকারী বলছেন, জীবনের ঝুঁকি হলে প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে তারা এখানে থাকছেন। একই ভাবে বসবাস করছেন টিনসেটের তৈরি মিল কলোনির শতাধিক শ্রমিক কর্মচারীর পরিবার। ২০১৪ সালে ৩ তলা বিশিষ্ট ৩টি ভবন পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়। বসবাসকৃত প্রতিটি পরিবার কে ভবন ছেড়ে খালি করার নোটিশ প্রদান করলে ও তারা জায়গার অভাবে ভবন ছাড়েনি। তারা বলছে ভবন ছেড়ে আমরা কোথায় যাব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিল অভ্যন্তরের এসব ভবনের আরসিসি কাজের জমাট ক্ষমতা (বন্ডস্ট্রেজ) ৯০ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। ছাদ, বীম, প্যারাপেট, রেলিং ও ড্রপওয়াল বিপদ জনক হয়ে গেছে। অধিকাংশ স্থানেই সিমেন্ট বালি ধ্বসে পড়ছে। ফলে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ২নং ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও ১ ও ৩ নং দুটি ভবনও ঝুকিপুর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
দির্ঘ ৫২ বছরে মিলের নানা পরিবর্তন হলেও শ্রমিকদের বসবাসের ঘর গুলোর কোন উন্নয়ন করা হয়নি। অথচ দির্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের কাছ থেকে এসব নি¤œমানের ঘরের ভাড়া বাবদ বেতনের শতকরা ১০ ভাগ। একই অবস্থা মিল অভ্যন্তরে টিনসেডে বসবাসকারীদের।
৭ বছর আগে ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকলের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বসবাসের জন্য তিন তলা বিশিষ্ট একটি ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। মিল অভ্যন্তরে অবস্থিত ২নং এফ টাইপের ভবনটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ঝুকিপূর্ণ এই ভবনের বাসকারী শ্রমিক-কর্মচারীদের পরিবারকে নিরাপত্তার জন্য অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তারপর এখনো সেখানে ১৮ জন শ্রমিক কর্মচারী তাদের পরিবার নিয়ে ঝুকিপূর্ণ জীবন যাপন করছেন। একইভাবে চিনিকলের শ্রমিক- কর্মচারীদের জন্য নির্মিত বেশির ভাগ ভবনই বর্তমানে বসবাসে অনুপযোগী বলে জানিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ।
যদিও মিল কর্তৃপক্ষ বলছে, ৫২ বছর আগের তৈরি এসব ভবণ ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। অন্যথায় ঝুকি নিয়েই শ্রমিকদের এখানে বসবাস করতে হবে।
মোচিক এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মহিদুল ইসলাম জানান, পরিত্যাক্ত ভবণে যারা থাকে তাদের ইচ্ছাতেই থাকে। ভালো আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়ে তারা থাকছে। করার কিছুই নেই। চেষ্টা চলছে মেরামত করে শ্রমিক কর্মচারিরা থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া ১৯৬৬-৬৭ সালে চিনিকলের শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য নির্মাণ করা এসব ভবণ গুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে আমরা অভিযোগ পেলে মেরামত করে দিচ্ছি। শ্রমিক কর্মচারীদের পরিবারের কথা চিন্তা করে আমরা নিয়মিত মেরামতের কাজ করে থাকি। টিনসেডের কলোনীতে বসবাসকারী বাবুল হোসেন জানান, ঘরের টিন বিভিন্ন স্থানে ফুটো হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। পানি ঠেকাতে হাড়ি পাতিল পাততে হয়। রাতে বৃষ্টি হলে অনেকে যতক্ষণ বৃষ্টি হয় ততক্ষণ বসে থাকতে হয়। অভিযোগ দেওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ মেরামত করে না। তবে অনেক বছর আগে কোন সমস্যা হলেই কর্তৃপক্ষ মেরামত করে দিত। অবশ্য একটু বৃষ্টি হলে ছাঁদ দিয়ে পানি পড়ে। কোন উপায় নেই যে কারণে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছি।
মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন জানান, ভবনটি প্রায় ৫২ বছর আগের নির্মিত। ভবনটি বর্তমানে কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। অত্যান্ত ঝুকিপুর্ণ হওয়ার পর শ্রমিকরা থাকছে। শ্রমিকরা তাদের নিরাপত্তা ও চাকরীর প্রয়োজনে অনেকটা বাধ্য হয়েই এসব ভবণে বসবাস করছে। তারপর আমার নির্মাণ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আছেন তারা নিয়মিত দেখভাল করছে। চেষ্টা করছে কিছুটা মেরামত করে বসবাসের উপযোগী করে তোলার। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত ভবন তিনটি মোরামত করে বসবাসের উপযোগী করবো।