ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে ভিন্ন জাতের ধান তোহামনি নামের নুতন এক জাতের ধান এর অভিরভাব। বিজাতীয় ধানের সাথে অন্য জাতের ধানের পরাগয়ানের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে নতুন জাতের ধান। এবারই প্রথম ইরি বোরো মৌসুমে কৃষক পর্যায়ে এই ধান চাষ করা হয়েছে। এ ধান পাকা সোনালী বর্ণের লম্বা শীষে হাসছে কৃষকরা। কৃষকরা বলছে দেশে উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের ধান থেকে তোহামনি ধান ফলনে কম নয় বরং বেশি হচ্ছে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ইমদাদুল হক নামের এক কৃষক বিজাতীয় ধানের সাথে অন্য জাতের ধানের পরাগয়ানের মাধ্যমে নতুন জাতের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। গেল বছর আমন মৌসুমে এ ধান চাষ করে আশাতিত ফলন পেলেন তিনি। ফলে তার নতুন জাতের এ ধান এলাকায় কৃষকদের মধ্যে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। চলতি ইরি মৌসুমে এলাকার কৃষকরা প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে তোহামনি ধান চাষ করেছেন। তার সংরক্ষিত নতুন জাতের এ ধানের নাম দিয়েছেন তোহামনি। তোহামনির ফলন দেশে চাষ হওয়া অন্য জাতের থেকে বেশি বলেও দাবি এই কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন অন্য জাতের ধানের চেয়ে তোহামনি জাতের ধানের ফলন অনেক বেশি হচ্ছে। গেল বছর আমন মৌসুমে তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে এই ধান চাষ করেন। এ ছাড়া একই এলাকার আরো দুই কৃষক তার কাছ থেকে বীজ নিয়ে দেড় বিঘা জমিতে এ নতুন জাতের ধান চাষ করেন। এর আগে ইরি বোরো মৌসুমে ৯ শতক জমিতে তোহামনি ধানের চাষ করে ১০ মন ৭ কেজি ধান পেয়েছিলেন। সেখান থেকে একমন ধানের বীজ রেখে বাকি ধান চাল করে খাচ্ছেন। তার উৎপাদিত তোহামনি ধানের বীজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ২০০ টাকা। এলাকার কৃষকরা অধিক ফলনের আশায় ২০০ টাকা কেজি দরে তোহামনি জাতের ধান ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। ইমদাদুল হক কালীগঞ্জ উপজেলার মেগুরখিদ্দা গ্রামের মৃত আবুল হোসেন মন্ডলের ছেলে। কৃষক ইমদাদুল হক একসময় পেশায় সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী ছিলেন।
ইমদাদুল হক বলেন, এ বছর ১০৭ শতক জমিতে ধান চাষ করেছেন। এরমধ্যে ৪০ শতকের একটি জমিতে ধানের গোছ রয়েছে ৩০ হাজার। প্রতি গোছ থেকে তিনি ধানের ফলন আশা পেয়েছেন ৫০ গ্রাম। সেই হিসাবে ৪০ শতকে ৩৭ মন থেকে ৩৮ মন ধান পাচ্ছেন। ইমদাদুলের ধানের আকার মাঝারী চিকুন। আমন মৌসুমে একটি ধানের শীষে ৪২০ থেকে ৪৫০ টি ধান হয়। ইরি মৌসুমে একটি ধানের শীষে ৩৫০ থেকে ৪০০টি ধান হয়। এরমধ্যে ৬০ থেকে ৮০টি ধান অপুষ্ট হয়ে থাকে। কিন্তু দেশে চাষ হওয়া অন্য জাতের ধানে ২৫০ থেকে ৩০০টি ধান থাকে। এ ছাড়া তোহামনি ধান গাছের উচ্চতা মৌসুম ভেদে সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার ফুট উঁচু হয়ে থাকে। ইরি মৌমুমে এই ধানের জীবনকাল ১৫০ দিন এবং আমন মৌসুমে ১২০ থেকে ১৩০ দিন। কৃষক ইমদাদুলের দাবি, তিনি পরাগায়নের মাধ্যমে বিজাতীয় ধান থেকে নতুন জাতে ধান উদ্ভাবন করেছেন। কিন্তু স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি নিয়ম না মেনে কৃষক পর্যায়ে পরাগয়ানের মাধ্যমে ধানের জাত পরিবর্তন একেবারেই অসম্ভব। ধানের জাত উন্নয়ন করতে হলে বৈজ্ঞানিক কিছু প্রক্রিয়া আছে যা ধাপে ধাপে সম্পন্ন করতে হয়।
কৃষক ইমদাদুল হক ২০১৫ সালে ধানের ক্ষেতে বিজাতীয় একটি ধান গাছ থেকে ছয়টি ধানের শীষ সংগ্রহ করে। পরে সুবল লতা ধানের সাথে ৪০ গোছ ধানের চারা রোপন করে পরাগয়ানের পর আবার সংগ্রহ করে। পরের বছর বাসমতি ধানের আবার ৪০ গোছ ধানের চারা রোপন করে সংগ্রহ করে। এরপরের মৌসুমে এক গোন্ডা জমিতে এই ধানের চারা রোপন করে বীজ সংগ্রহ করেন। ২০১৯ সালে ইরি বোরো মৌসুমে ৯ শতক জমিতে ধান রোপন করেন। এই জমিতে ১০ মন ৭ কেজি ধান পান। ২০২০ সালে আমন মৌসুমে সেই বীজ থেকে সাড়ে তিন বিঘা জমি চাষ করেন। মাঠে চাষ হওয়া অন্য ধানের থেকে আমার ধানের শীষ বড় এবং ধানও বেশি। সবার আগে পাক ধরে। আশা করি ৩৩ শতকের বিঘা জমিতে ৩০ মন ধানের বেশি হবে।
গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আক্তারুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর ধরে ইমদাদুল হক এই ধান নিয়ে কাজ করছেন। এলাকার অনেকে তাকে ধান গবেষক বলে রহস্য করে, কেউ আবার পাগলও বলে। কিন্তু গেল ইরি ও আমন মৌসুমে তার ধান দেখে সবাই অবাক হয়েছে। এলাকার কৃষকরা বলছে তোহামনি জাতের ধানে এত ফলন তারা আগে জানতো না। এখন সবাই তার ধান বীজ নেওয়া জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মোঃ মোহায়মেন আক্তার জানান, আমি সংবাদ পেয়ে তার ধান ক্ষেত দেখতে গিয়েছি। জমিতে নিয়ম মেনে চারা রোপন বা সার কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়নি। তারপরও তার ধান চাষ সন্তোষকজনক হয়েছে। ধানের শীষে যে পরিমাণ ধান রয়েছে তাতে ফলনও সন্তোষজনক। কিন্তু জাত উন্নয়নের দাবি নিয়ে কিছু বলতে পারবো না। বাংলাদেশ কৃষি ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা আছেন, নিয়ম মেনে চাষ করছে তারা পরবর্তি মৌসুমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলতে পারবেন জাত উন্নয়ন হয়েছে কিনা বা আদৌ জাত উন্নয়ন সম্ভব কি না। তবে তার চাষে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সব সময় খোজখবর রেখেছি এবং আর্থিক ও প্রযুক্তিসহ সার্বিক সহযোগিতা করেছি।