কালীগঞ্জের এক সময়ের ক্ষর¯্রােতার চিত্রা সীমিত জলাশয়ে পরিনত হয়েছে। নদীটিতে কোন গভীরতানেই,নেই জোয়ার ভাটা। ক্রমান্বয়ে পলি মাটি,বাজারের ময়লা আবড়জনা, পাকা ভবন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,পাকা বসত বাড়ি গড়ে তুলে নদীটি সরু খালে পরিনত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারণে চিত্রা নদীচি এখন মৃত্যু প্রায় হয়ে পড়েছে। নদীর দু,পাড়েই শত শত পাকা বাড়িঘর, আর অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে ভাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জিত করছে। অথচ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে না। বাসাড়ির বর্জ্য ময়লা, বাথরুমে পাইপ দিয়ে মল ফেলা হচ্ছে চিত্রা নদীতে। এতকরে পরিবেশ মারাতœক দুষিত হচ্ছে। নদীর মধ্যে বড় বড় পুকুর। পুকুর পাড়ে লাগানো হয়েছে বনজ গাছ। গাছগুলো এতোটা বড় হয়ে উঠেছে যে নদীকেই আড়াল করে ফেলেছে। একপাশ থেকে আরেক পাশ দেখা যায় না। এই নদীর জায়গা দখল করেই নির্মান করা হয়েছে অসংখ্য ভবন। বসানো হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এখনও চলছে এই দখল পক্রিয়া। যেন কারো কিছুই বলারও নেই।
এভাবে দখলের পর দখল করায় সংকোচিত হয়ে গেছে দক্ষিনাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী চিত্রা নদীটি। দখলদাররা আস্তে আস্তে দখল করে নদীটিকে প্রায় গ্রাস করে ফেলেছে। একটি সময়ে যে নদীতে লঞ্চ-স্টিমার চলতো সেই নদী এখন খালে পরিনত হয়েছে। দখলদাররা প্রভাব শালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ নানা অজুহাতে এই দখল অব্যাহত রয়েছে।
চিত্রা নদী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কালীগঞ্জের চাঁচড়া এলাকা থেকে শালিখা পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৫ কিঃ মিঃ লম্বা নদীর দুই পাড় চলেছে এই দখলের প্রতিযোগিতা। এখানে নদীর জায়গায় পুকুর কেটে মাছ চাষ করা হচ্ছে। নদী ভরাট করে নার্সারী প্রতিষ্ঠা ও করেছে দখলদাররা। মার্কেট, গড়ে তোলা হয়েছে। পরিকল্পিত ভাবে পাঁকা ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এখনও কিছুকিছু স্থানে নির্মান কাজ চলছে। দখলের কারণে নদীটি খালে পরিনত হয়েছে। অথচ একটি সময়ে এই নদীতে লঞ্চ-স্টিমার চলতো। নদীতে চলাচলকারী নৌকায় মালামাল আনা-নেওয়া হতো। নদীর ঘাটকে ঘিরে গড়ে ওঠে কালীগঞ্জ শহরটি।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের মেইন বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে চিত্রা নদীর ব্রীজ সংলঘœ নির্মান শুরু হয়েছিল একটি বিশাল পাঁকা ভবন। শিবনগর গ্রামের নিচে নদীর জায়গায় ঘর তৈরী করে মুরগীর ফার্ম করেছেন। শহরের মধ্যে নদীর উপর থাকা সেতুটির (পুরাতন সেতু) দুই পাশে মার্কেট গড়ে উঠেছে। সেতুর পশ্চিমে নদীর দুই পাড়ে যেভাবে বড় বড় পাঁকা ভবন তৈরী হয়েছে, এখন দেখে বোঝার উপায় নেই এটা নদী। নদীটি খালে পরিনত হয়েছে। সেতুর পূর্ব পাশেও দুই পাড়ে অসংখ্য পাঁকা ভবন। এক শ্রেনীর লোকজন নানা কাগজপত্র দেখিয়ে এই সকল জায়গাটি তাদের দাবি করে আসছেন। কিন্তু প্রবীন ব্যক্তিদের ভাষায় এগুলো সবই এক সময়ে নদীই ছিল। শহরের কালীবাড়িটিও কিছু অংশ নেমে গেছে নদীর মধ্যে। সেখানেও দখল হয়েছে নদীর জায়গা। হাসপাতালের নিচে নদীর মধ্যে বিশাল বড় পুকুর কাটা হয়েছে। এই পুকুরের পাড়ে বিশাল বিশাল গাছ রয়েছে। যেগুলো নদীর পানির গতিপথই নয়, গোটা নদীটিই আড়াল করে দিয়েছে। শুধু দখল নয়, নদীতে নানা ধরনের ময়লা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। ক্লিনিকের বর্জ্য, শহরের ময়লা ফেলে পানি দুষণ করা হচ্ছে। একাধিক ব্যক্তি জানান, এক শ্রেনীর মানুষ বস্তায় ভরে ময়লা এনে সেতুর উপর থেকে নিচে পানিতে ফেলেন। অনেক ক্ষেত্রে কুকুর-বিড়াল মারা যাওয়ার পরও বস্তায় ভরে নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে নদীর পানি দুষিত হচ্ছে। শহরের সিনেমাহল এলাকার বাসিন্দা মোশারফ হোসেন জানান, প্রায়ই তাদের চোখে পড়ে নদীতে ময়লা ফেলা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে উল্টো খারাপ আচরণ করেন দখলদাররা।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা রাণী সাহা জানান, এগুলো উচ্ছেদের জন্য গণজাগরন প্রয়োজন। যারা এভাবে দকল করছে তাদের বিরুদ্ধে শুধু আইন দিয়ে কাজ হবে না। তিনি বলেন, নদীর মধ্যে ভবন, পুকুর এগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন।