জনবল ও যোগ্য নেতৃত্ব সংকটের কারণে স্থবিরাবস্থা বিরাজ করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে (ইইডি)। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে আরিফুর রহমানকে চলতি দায়িত্বে প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর থেকে সরকারের এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কাজকর্মে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে নির্বাচনী পুরষ্কার হিসেবে ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৬টি মাদরাসায় নতুন ভবন নির্মাণ ও ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ দেয় সরকার। সারাদেশে মোট ৭ হাজার ৮০০ ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। তবে জনবল ও যোগ্য নেতৃত্ব সংকটের কারণে সেগুলো স্থবির হয়ে পড়েছে। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভবন নির্মাণ, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পুনর্নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার, আসবাবপত্র সরবরাহের কাজেও স্থবিরতা বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৭৫ ভাগ জনবল শূন্য থাকায় মাঠ পর্যায়ে ইইডি কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। তার সঙ্গে দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদে জ্যেষ্ঠতা অবলম্বন না করে জুনিয়র একজনকে রুটিন দায়িত্ব দেয়ায় সিনিয়র প্রকৌশলীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানের নির্দেশনা অনেকে মানছেন না। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আর্থিকসহ বিভিন্ন কাজে সমস্যা হচ্ছে। দ্বিতীয় পদ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদটিও শূন্য। সারাদেশে উন্নয়নমূলক কাজ তদারকি করতে যে পরিমাণ জনবল প্রয়োজন তার ৭৫ শতাংশ ফাঁকা। বর্তমানে দপ্তরটিতে ১ হাজার ৮৪৭টি পদ শূন্য। এতে উন্নয়নমূলক কাজের নিয়মিত তদারকি চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তবে ইইডির কর্মকর্তারা বলছেন, এসব শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ কার্যক্রম চলমান। সরকারি কর্ম কমিশন ও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলতি বছরের মধ্যে এসব শূন্য পদ পূরণ হয়ে যাবে। তারা জানান, সিস্টেম এনালিস্ট থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে সে পদটি শূন্য। নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) ৭২ জনের বিপরীতে আছেন মাত্র ৩২ জন। নেই কোনো আইন কর্মকর্তা, উপ-পরিচালক (অর্থ) পদটিও ফাঁকা। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, অর্গানোগ্রামে ৩ হাজার ১৭৪ জন থাকলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ করছে মাত্র ৮১৪ জন। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা থেকে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী সব শ্রেণিতেই রয়েছে জনবলের তীব্র সংকট। যে কারণে প্রতিষ্ঠান সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। জানা গেছে, ইইডিতে প্রথম শ্রেণির ৪৩৩টি পদের মধ্যে শূন্য পদ রয়েছে ২৫৯টি। অর্থাৎ শতকরা ৬০ ভাগ পদ ফাঁকা। এছাড়াও পূরণকৃত পদ আছে ১৭৪টি। সরাসরি নিয়োগযোগ্য শূন্য পদ রয়েছে ১৭২টি এবং পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগযোগ্য শূন্য পদ আছে ৮৭টি। দীর্ঘদিন কেন এত নিয়োগ বন্ধ ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী (রুটিন দায়িত্ব) আরিফুর রহমান বলেন, জনবলের ঘাটতি আছে তবে কাজের স্থবিরতা নেই। কারণ আমরা এক হাতে দুইজনের কাজ করছি। কখনো কখনো ডাবল শিফটে কাজ করছি। তিনি বলেন, শূন্য পদের বিপরীতে পিএসসি, অভ্যন্তরীণ নিয়োগের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে কার্যক্রম চলমান। এ প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এক নির্দেশনায় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে আরিফুর রহমানকে চলতি দায়িত্বে প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দেয়া হয়। জ্যেষ্ঠতার তালিকায় আরিফুর রহমানের অবস্থান অনেক পেছনে থাকার পরও জুনিয়র এই কর্মকর্তাকে প্রধানের দায়িত্ব দেয়ায় অনেকের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। এরপর থেকে এ প্রতিষ্ঠানের সকল কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির আস্থাভাজন হওয়ায় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে আরিফুর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।