ট্রেন চালক সংকট নিরসনে চুক্তিভিত্তিক (এলএম) নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এপ্রিল মাসের শুরু থেকে চলতি বছরে ১৩ জন এলএম অবসরে যাবেন। ট্রেন চালক সংকট জটিল হওয়ায় চুক্তিতে চালক নিয়োগ দেয়া হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হলে চালকদের দ্বায়িত্ব পালনে গুরুত্ব অনেকটাই কম থাকে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। অবসরে যাওয়া ট্রেন চালকরা বয়সেরভারে দ্বায়িত্বহীনতায় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশিই রয়ে যায়। এমনটাই মত বিশ্লেষকদের। দ্বায়িত্ব অবহেলায় যদি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে এর দায়ভার কে নিবে। প্রশ্ন জনসাধারণের। এলএম যারা অবসরে যাবেন তারা হলেন,নজরুল ইসলাম তাঁর আগামী ৩ এপ্রিল চাকরির বয়সসীমা শেষ,একই নামের নজরুল ইসলাম ২৮ এপ্রিল অবসরে যাবেন,পরের মাস ৮ মে, পিআরএলে যাবেন,আব্দুল করিম, জুন মাসের ৩০ তারিখে অবসরে যাবেন,মুসলেমউদ্দীন,ওই মাসের ২৮ তারিখে চাকরি থেকে অবসরে যাবেন এসএলএম,সাইফুল ইসলাম, ২০২১ সালের ২০ আগস্ট পিআরএলে যাবেন,শামসুল হক,২০ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন অমল কুমার সিকদার,২ অক্টোবর চাকরির বয়সসীমা শেষ হবে আবুল কালাম আজাদের,একই মাসের ১২ তারিখে অবসরে যাবেন এলএম আবুল কালাম আজাদ, ৮ নভেম্বর অবসরে যাবেন আশরাফুল হোসেন,ওই মাসের ১৮ তারিখে পিআরএলে যাবেন,এসএলএম,জয়নাল আবেদীন,একই মাসের ২৩ তারিখে অবসরে যাবেন মো.হুমায়ুন কবির,২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন,মো.হোসেন আলী।
এদিকে রেলওয়ে ৮টি পদে বৈষম্য রেখে সংশোধন করা হয়েছে ২০২০ সালের নিয়োগ বিধি। লোকবল নিয়োগে রেলের নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন। গত ১৩ মার্চ রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ও রেলওয়ের বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। নিয়োগ জটিলতা রেখেই খুব শিগগিরই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। সমস্যা দ্রুত নিরসন না হলে মে মাস থেকে ২০২১ সালের ৩০ডিসেম্বরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ১৩ জন এলএম অবসরে যাবেন। এতে করে সামনের দিকে যাত্রীবাহি ট্রেন চলার কিছুটা বিঘœ হলেও মালবাহী ট্রেনের চাকা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন ট্রেন পরিচালনায় নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন,পূর্ব ও পশ্চিম দুই অঞ্চলে মিটারগেজ ও ব্রটগেজসহ মোট ১৪০টি ট্রেন ইঞ্জিন চলাচল করে।
রেলভবন সূত্রে জানা গেছে দেশে আশা কোরিয়ার বির্তকিত দশ ইঞ্জিন এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪০টি বিজি লোকোমোটিভের মধ্যে ৮টি দেশে এসেছে বাকি ৩২টি আসার অপেক্ষায় আরও ৯০টি ইঞ্জিন প্রক্রিয়াধীন এ ছাড়া কোরিয়া থেকে আগামী জুন বা জুলাই মাসের শেষের দিকে আরও ২০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন আশার কথা রয়েছে।
অপরদিকে নিয়োগ বৈষম্য নিন্মে উল্লেখ করা হলো- প্রথমতো টাইম কিপার পদে একেক ডিপার্টমেন্টে একেক রকম নিয়মে পদোন্নতি ও নিয়োগ দেয়া হবে,খালাসি ও ট্রেড অ্যাপ্রেনটিস একই শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া
হয়েছে। যদিও খালাসি ২০ গ্রেড,আর ট্রেড অ্যাপ্রেনটিস প্রশিক্ষণের পর ১৫
গ্রেড, টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগে কোন কর্মচারীর কোন ধরনের প্রমোশন রাখা
হয়নি। তাহলে ওদের কি অপরাধ? টাইম কিপার ও অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর দুটি পদ একই ক্যাটাগরির। অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটরের প্রমোশন
আছে, টাইম কিপারের কোন প্রমোশন নেই। অথচ একজন অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর সমগ্র চাকুরী জীবনে প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা হয়ে অবসরে যাবে, আর টাইম কিপার সারাজীবন টাইম কিপারই থাকবে। প্রশ্ন শ্রমিকদের, উচ্চমান সহকারীর বর্তমান গ্রেড-১৩ তা কমিয়ে ১৪-গ্রেডে নামিয়ে আনা হয়েছে, এমএস,টিসিএম,গার্ড এসব পদে আগে এইচএসসি পাশ চাওয়া হতো। এখন তা স্নাতক পাশে উন্নীত করা হয়েছে, ৮ বছর ১২ বছর ১৩ বছর পর সামান্য এক গ্রেড উপরে প্রমোশন রাখা হয়েছে তাও আবার সবাই পাবে না দু একটা ভেগেন্সী
খালি থাকলে প্রমোশন পাবে, পোষ্য কোটায় চাকুরী পাওয়ার যোগ্যতা আগে ছিল
পিতা-মাতার চাকরির বয়স ১৫ বছর পূর্ণ হলে,এখন তা বাড়িয়ে ২০ বছর করা হয়েছে। এই নিয়োগ বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রেলশ্রমিক নেতারা।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব মুহাম্মাদ আবদুস সালাম বলেন,এডিজি এমএনসিপির সমন্বয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া যাচাই-বাছাই করতে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। গঠিত কমিটিতে ১জন সচিব একজন উপপরিচালক সদস্য,পিএসসির একজনসহ মোট ৫ জনের কমিটি। তিনি বলেন,বর্তমানে রেল সেবায় নিয়োজিত মোট ২৩ হাজার শ্রমিক রয়েছে। ৮৫ বিধি সংশোধনে আটটি বৈষম্য আছে বলে অভিযোগ উঠেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে এই বৈষম্য ঠিক হয়ে যাবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে তাহলে নিয়োগ শুরুর সময় কি অডিনেন্স জারি করা হবে? চুক্তিতে এলএম নিয়োগের বিষয়ে উপসচিব সালাম জানান,যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দেয়া হবে। তাঁদের দ্বারায় যদি ট্রেন দুর্ঘটনা হয় তাহলে তার দায়ভার কে নিবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হবে তাঁরা চুক্তির মেয়াদ শেষ করে অবসরে গেলেও আমৃত্যু পর্যন্ত দ্বিগুণ পেনশন পাওয়ার আশায় দুর্ঘটনা ঘটাবেনা বলে অভিমত তাঁর।
লালমনিরহাট বিভাগের ডিএমই রাসেল আলম বলেন,এই বিভাগে সবমিলিয়ে লোকোমোটিভ রয়েছে ৩০টি এর মধ্যে প্রায় ২০টি ইঞ্জিন সবসময় লাইনে চলাচল করে। বাকি ১০টি ইঞ্জিন ওয়াসফিডে শানডিংএর জন্য নেয়া হয়। ২০টি লোকোমোটিভ পরিচালনার জন্য এলএম,এসএলএম এএলএমসহ ৫টি পদে মুনঞ্জুরী আছে ২৮১ জন। কিন্তু বাস্তবে রয়েছে ১৩২জন। তার মধ্যে সবাই ট্রেন চালক নয়। ২০টি ইঞ্জিন লাইনে পরিচালনায় যে ক'জন এলএম প্রয়োজন তার তুলনায় অর্ধেকও নাই। যার কারণে প্রত্যেক এলএমকে ৮ঘন্টা ডিউটির বিপরীতে ৪৬থেকে ৪৭ঘন্টা দ্বায়িত্ব পালন করতে হয়।
কমলাপুর বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী লোকোর দপ্তর সূত্র বলছে,এলএম,এএলএম এবং এসএলএমসহ ৫টি ক্যাটাগরিতে মুনঞ্জুরি রয়েছে ৫৫৫ জন। কিন্তু বাস্তবে কর্মরত আছে ৩১০জন। ঢাকা ডিএমই দপ্তরের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান,৫টি পদের বিপরীতে ৩১০ জন। কিন্তু ট্রেন পরিচালনায় এলএমের সংকট আছে। এএলএম এবং এসএলএমরা ইঞ্জিন ওয়াসফিডে নিয়ে শানডিং করার কাজে নিয়োজিত থাকে। ট্রেন চালক সংকট থাকায় তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাতে এলএমদের ঘুমের ঘারতি নিয়েই পরের ট্রেন নিয়ে যাত্রা করতে হয়। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
পাকশির ডিএমই আশিষ কুমার মন্ডল বলেন,এলএম ১৭৫ জন মুনঞ্জুরি থাকলেও কর্মদ্বায়িত্ব পালন করছে ১৪৮ জন। ২৭ জন কম এলএমের ঘারতি পুরনে অতিরিক্ত ডিউটি করতে হয় তাদের। এএলএম মুনঞ্জুরি আছে ২৬১ জন কিন্তু খাতা-কলমে আছে ১৯১ জন। এখানে ৭০ জন এএলএম কম রয়েছে। এসএলএম মুনঞ্জুরি আছে ৭২জন কিন্তু কর্মরত রয়েছে ৪০ জন। ৩২ জন এসএলএম কম দিয়েই লোকোমোটিভ শানডিংএর কাজসহ ইঞ্জিনের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। ৯২টি ইঞ্জিনের বিপরীতে ট্রেন পরিচালনায় ১৪৮ জন ট্রেন চালক রয়েছে। সরকারি রুলস অনুযায়ী ৮ঘন্টা ডিউটি করার কথা থাকলেও এলএম সংকটের কারণে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের। তবে পাকশির ডিএমই বলেন,ট্রেন চালক সংকটের কারণে গুসট্রেন পরিচালনায় কিছুটা বিঘœ ঘটে।