নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন নদীর বুকে এখন দেখা যাচ্ছে চাষাবাদ। এ উপজেলার কোল ঘেঁষে প্রবাহিত চাড়াল কাটা ও ধাইজান নদী। এ নদীগুলো এখন যৌবন হারিয়ে সংকুচিত হয়ে মরা খালে পরিণত হয়ে হয়েছে। অথচ বর্ষা মৌসুমে হাজারো মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি বিলিন হয়ে যায় ওই নদীগর্ভে। সময়ের সেই যৌবন হারিয়ে খর¯্রােতা নদীর বুক জুড়ে বোরো ধানের চাষাবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে ১ মাস থেকে ২ মাস পর্যন্ত সাধারণত নদীতে পানি থাকে। ওই নদী দু’টি তার আপন সত্তা হারিয়ে আগাম শুকিয়ে যাওয়ায় নদীর বুকে সাফল্যজনকভাবে চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষ করছে স্থানীয় ভূমিহীন কৃষকেরা। অথচ ওই নদী দিয়ে একসময় পাড়া পাড়ের ব্যবস্থা ছিল একমাত্র বাহন নৌকা। দূর থেকে ভেসে আসত মাঝি-মাল্লার গান। চোখে পড়ত গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের নদীর জলে সাঁতার কাটার দৃশ্য। উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত সেই খর¯্রােতা নদীগুলো শুধু বর্ষাকালে কয়েকদিনের জন্য ফুটে উঠে নদীর চিত্র। বর্ষা শেষ হলে নদীগুলো হয়ে যায় যেন খাঁ খাঁ মরুভুমি। এখন সেই নদীর তলায় চাষাবাদ হচ্ছে ইরি-বোরো ধান, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, রসুন, পেঁয়াজসহ অনেক ফসল। ভুমিহীন কৃষকেরা সেই যৌবন হারা নদীতে বোরো ধান চাষাবাদ করে ৫ থেকে ৬ মাসের খাবারের সংস্থান করে থাকে। তাইতো কৃষাণ-কৃষাণীরা এখন নদীর তলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্ষাকালের পানি ও ফসলি জমির আর্দ্রতা ধরে রাখে একমাত্র ওই নদীগুলো। বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে এ নদীগুলো দিয়ে।
এলাকাবাসী জানান, জলবায়ুর পরিবর্তন আর প্রাকৃতিক বিরুপ প্রভাবের কারণে নদীগুলোর বাস্তব চিত্র সবুজে ঘেরা ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে।
উপজেলার পুটিমারী কালিকাপুর পোড়াকোট গ্রামের আনছারুল জানান, হামার বাপ-দাদার জমি জমা নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে, সেই নদীর তলায় ইরি-বোরো ধান চাষাবাদ করে বছরে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাসের খাবারের সংস্থান হয়। সদর ইউপি’র যদুমণি গ্রামের দিনমজুর উকিল জানান, আমার কোন চাষাবাদ যোগ্য জমি জমা নেই এ নদীর তলায় বোরো ধান চাষ করে কয়েক মাসের খাবারে সঞ্চয় হয়। এ ধান চাষে বাড়তি কোন সেচ ও কোন পরিচর্যা করতে হয়না আর ফলনও ভালো হয়। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান লক্ষমাত্রার বাইরে কয়েক হেক্টর নদী তলায় ইরি বোরো ধান চাষাবাদ করে ভূমিহীন পরিবার বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন।