খুলনার দক্ষিণে উপকূলবর্তী এ জনপদের মানুষ জলবায়ু ও ভৌগলিক কারণে প্রায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হন। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে পাউবো' বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন মানুষকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ফেলে। বাঁধ ভেঙ্গে গেলে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। ষাটের দশকে নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা বাঁধে সুদীর্ঘ সময় নিয়মিত মাটির কাজ না হওয়ায় বাঁধের বেশির ভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে নাজুক আকার ধারণ করেছে। বার বার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বেড়িবাঁধ গুলো এখন জরাজীর্ণ। জরুরী ভিত্তিতে টেঁকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর। খুলনার পাইকগাছা উপজেলা বিশিষ্ট মানবধিকার কর্মী ও অ্যাড. এফএমএ রাজ্জাক বলেন, উপজেলার বেশির ভাগ বাঁধ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বেড়িবাঁধ নিচু ও সরু হয়ে গেছে। তাছাড়া অনেক স্থানের বাঁধ কেটে লোনা পানি তুলে জনগণের চলাচলের রাস্তা ক্ষতি করে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের জ্ঞাত থাকার পরও সেগুলো সংস্কারের কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উপজেলা পাউবো জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের একই অভিযোগ। এলাকাবাসীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সামুদ্রীক ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাত, ২০০৯ সালে ২৫মে সামুদ্রীক ঘূর্ণিঝড় আইলার জলোচ্ছ্বাস, পাইকগাছা পৌরসভার দক্ষিণ-পশ্চিমে শিববাটি থেকে বোয়ালিয়া পর্যন্ত একাধিক স্থানে ভেঙ্গে যায়। ঘরবাড়ি, ফসল ও লিজ ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। একই অবস্থা উপজেলার অন্যান্য বেড়িবাঁধ গুলো। এতে এলাকাবাসী চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় এলাকাবাসী ভাঙ্গনকৃত বাঁধগুলো স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কোনো মতে মেরামত করে পানির স্্েরাত আটকায়। সে ভাবেই বেড়িবাঁধ পড়ে রয়েছে। সরেজমিনে এসকল স্থান গুলো ঘুরে দেখা গেছে, অরক্ষিত পাইকগাছা পৌরসভা শহর রক্ষাসহ লতা ও দেলুটিয়া ইউপি বেড়িবাঁধ গুলো। উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে শিববাটির আশ্রায়ন প্রকল্পস্থ ইন্দুকাটা স্থানে ওয়াপদার একাধিক জায়গায় ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ একই ভাবেই পড়ে রয়েছে। ভাঙ্গন দিয়ে চুয়ে চুয়ে লোনা পানি প্রবেশ করছে। বাঁধটি এখনই সংস্কার না করলে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত জোয়ারে ভেঙ্গে আবারও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। একইসাথে এই দীর্ঘ পরিক্রমায় এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর জানান, গত ১০ বছর যাবত শুনছি বিশ্বব্যাংক ও জাইকা নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ করবে। তিনি সরকারের কাছে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জোর দাবি জানান। এদিকে সামাজিক সংগঠন কৃষি-প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা কমিটি (২০নং পোল্ডার) তিন দফা দাবী হলো বর্ষা মৌসুমের আগে বন্যা নিয়ন্ত্রণ টেঁকসই ভেড়িবাঁধ নির্মাণ, পোল্ডার অভ্যন্তরে লবণ পানি উত্তোলন বন্ধের সরকার ঘোষিত সিদ্ধান্তের দ্রুত ও কার্যকরি বাস্তবায়ন, সর্বনাশা লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ করে সাধু পানিতে ধান্য ও মৎস্য চাষের পরিবেশ সৃষ্টি।