মত বিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, ১০৩ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে জনবলের তীব্র সংকট রয়েছে। ৩৭ টি পদের বিপরীতে ডাক্তার রয়েছেন মাত্র ১২ জন, যার থেকে আবার ২ জনকে জেলখানায় চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রেরণ করতে হয়। চক্ষু, কার্ডিওলজি, অর্থপেডিক্সসহ কয়েকটি বিভাগে কোন কন্সালটেন্ট নেই। ডাক্তার স্বল্পতায় ব্যহত হচ্ছে হাসপাতালের কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্যসেবা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশলান বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ফরিদপুরের উদ্যোগে বৃহস্পতি বার ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে স্বাস্থ্যসেবার মানন্নোয়ন বিষয়ে এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সনাক ফরিদপুরের সভাপতি অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনলাইন মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডা: মো: সিদ্দিকুর রহমান। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সনাক ফরিদপুরের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক মনোয়ারা মোর্শেদা চৌধুরী। সভায় করোনাকালীন সময়ে হাসপাতালের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা, মায়েদের জন্য ব্রেস্টফিডিং কর্ণার সচল রাখা, ঔষধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, প্রতিদিনের ঔষধের তালিকা হালনাগাদ করণ, দালালের উপদ্রুপ নিরসন এবং কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডা: মো: সিদ্দিকুর রহমান বলেন এধরনের জনবল সংকটের মধ্যেও মানুষ যাতে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হয় তার জন্য প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন দালালের উপদ্রুপ বন্ধকরার জন্য পুলিশ সুপারকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। কয়েক বার অভিযান পরিচালনা করেছি। আগের তুলনায় কিছুটা হলেও দালালের আনাগোনা কমেছে। পুরোপুরি দালাল মুক্ত করার জন্য সকলের সহয়োগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন হাসপাতালে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলোর জন্য বাহিরে না পাঠানো এবং কোন ক্লিনিকের ছাপানো কাগজে টেস্টের এ্যাডভাইস না দিয়ে প্রয়োজনীয় টেস্টের নাম প্রেসক্রিপশনে লিখে দেবার জন্য ডাক্তারদের মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছি, প্রয়োজনে চিঠি প্রদান করা হবে।
ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার সম্পর্কে সিভির সার্জন বলেন, একটি চলমান কর্মসূচি, এর মাধ্যমে মা’দের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যেগ নেয়া হবে। সরকারের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন ফরিদপুরে ১২০০ ভায়াল তথা ৬০ হাজার ডোজ টিকা সংরক্ষণের ক্যাপাসিটি রয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতি উপজেলায় ১টি, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪টি ও সদর হাসপাতালে ১টি কেন্দ্র থেকে টিকা প্রদান করা হবে। টিকার জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মীগণ প্রথমে টিকা পাবেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সদর হাসপাতালের আবসিক চিকিৎসক ডা: গনেশ কুমার আগরওয়ালা বলেন, দীর্ঘদিন যাবত রেডিওলোজি বিভাগে কোন জনবল নেই। ফলে এক্সরে, আল্ট্্রাসনোগ্রামের মত সেবা প্রদান করা যাচ্ছে না। আউটডোরে ঔষধের তালিকার বিষয়ে তিনি বলেন নতুন ওষুধ যুক্ত হলে বা ওষুধ পরিবর্তন হলে তালিকা হালনাগাদ করা হয়।
সনাক ফরিদপুরের সভাপতি এ্যডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন স্বল্প জনবল দিয়ে কর্তৃপক্ষের সেবা প্রদানের আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবী রাখে। তিনি ডাক্তারের শুন্যপদ পুরনের জন্য ঊর্ধতন কর্র্তপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষনের অনুরোধ জানান এবং এ বিষয়ে সনাক ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে প্রয়োজনে ঊর্ধতন কর্র্তপক্ষের নিকট চিঠি প্রদানের কথা বলেন।
মুক্ত আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে মতামত ব্যক্ত করেন সনাক সহ-সভাপতি অধ্যাপক শিপ্রা রায়, সনাক সদস্য কামরুন্নাহার পপি, স্বজন সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট বশির আহমেদ চৌধুরী, সহ-সমন্বয়ক মো: মাহবুবুর রহমান ও রিসালাতুন্নাহার। মতবিনিময় সভাটি সঞ্চালনা করেন টিআইবি’র এরিয়া ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম জুয়েল।