চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভুয়া প্রশিক্ষণার্থী দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ টাকা আত্মসাতের সঙ্গে সরাসরি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা প্রভাতী মাহাতো সংশ্লিষ্ট আছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতার অর্থ ক্রসড চেকের মাধ্যমে দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা না করে নগদে টাকা পরিষদ করা হচ্ছে প্রশিক্ষণার্থীদেরকে। যদিও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা প্রভাতী মাহাতো তার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার নামে ওঠা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ঢাকতে অফিস সহকারী এমদাদুল হককে তথ্য ফাঁসের অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অফিসে আসতেও তাকে মৌখিকভাবে নিষেধ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অফিস সহকারী এমদাদুল হক নিজেই।
জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রতি বছর ওই প্রকল্পের আওতায় ১০০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে এবং প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে ভাতা হিসেবে ৬ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। ২৫ জন নারীর অংশগ্রহণে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ৩ মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়। কিন্তু নাচোলে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ২০জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েই বাকি ৫জনের ভুয়া নাম ব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। অপর এক অভিযোগে জানাগেছে প্রশিক্ষণভাতার প্রাপ্য ৬ হাজার টাকা প্রদান না করে প্রশিক্ষণে অনুপস্থিতি থাকার জন্য প্রত্যেক দিনের জন্য ১০০ টাকা করে কেটে প্রত্যেক প্রশিক্ষণাথীকে ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত কম দেয়া হলেও টাকা পরিশোধের মাস্টাররোল সীটে ৬ হাজার টাকা পরিশোধ দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে নিজের অফিস স্টাফের স্ত্রীকেও তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে প্রশিক্ষণভাতার অর্থের বিপরিতে ক্রসড চেক প্রদানের জন্য ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর যুগ্মসচিব ও প্রকল্প পরিচালক শফিকুজ্জামান স্বাক্ষরিত নং-৩২.০১.০০০০.০৪৭.১৬.০১৬.১৭-২৬০ স্মারকপ্রত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। অপর দিকে ওই বছরই ১৯ নভেম্বর ৩২.০১.০০০০.০৪৭.১৬.০১৬.১৭-২৮২ নং স্মারক পত্রে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে সোনালী ব্যাংকে ১০ টাকায় হিসাব খোলারও নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু সরকারি কোন নির্দেশনা না মেনে অর্থ আত্মসাতে কৌশল হিসেবে প্রশিক্ষণভাতার অর্থ নগদে প্রদান করছেন নাচোল উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা প্রভাতী মাহাতো। এ বিষয়ে নাচোলে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা সরকারি ওই নির্দেশনার বিষয়টি অবগত বলে জানিয়েছেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আরও জানান, নাচোল উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কোনো প্রশিক্ষণার্থীর ব্যাংক হিসাব খোলা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই ব্যাংক হিসাব খোলার সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করা হয়েছে।
অন্য আরেক অভিযোগে জানাগেছে প্রশিক্ষণের জন্য ভাড়া নেয়া আদিবাসী একাডেমির ভাড়ার পুরো টাকা পরিশোধ না করে ৫০% টাকা আত্মসাৎ করেছেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা প্রভাতী মাহাতো। জানাগেছে, নাচোল আদিবাসী একাডেমিকে ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল ও পানির বিল বাবদ সর্বমোট ৩১ হাজার ২০০ টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও দেয়া হয় ১৮ হাজার টাকা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদিবাসী একাডেমির সভাপতি যতীন হেমরম।
এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা প্রভাতী মাহাতোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করে বলেন, সারা দেশের কোথাও ব্যাংকের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীদের টাকা প্রদান করা হচ্ছে না, এজন্য আমিও নগদ টাকা প্রদান করছি। নির্দেশনার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং এ প্রতিবেদকের সাথে রুঢ় আচরণ করেন।
উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জান্নাতুন নাইম মুন্নী দাবি করে বলেছেন, প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের হিসাব মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তাকে জানান না। তিনি বলেন, অনিয়ম হয়ে থাকলে বিষয়টির অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি তার পুরোপুরি জানা নেই। তবে এটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাহিদা আক্তার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের যুগ্ন সচিব ও প্রকল্প পরিচালক মো. তরিকুল আলম এর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বলেন, অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্তপুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।