চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের আট উপজেলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ২০ হাজার অনিবন্ধিত সিএনজি টেক্সি। এতে নিবন্ধন না থাকার কারণে গত ১০ বছরেই এসব সিএনজি থেকে শত কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। মহাসড়কে তিন চাকার এসব যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আছে বহু আগেই। এরপরেও পুরো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নিবন্ধিত অটোরিকশা চলছেই। এর পাশাপাশি দিনরাত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অনিবন্ধিত অটোরিকশাও। আবার মহাসড়কের প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ অটোরিকশার স্ট্যান্ডও। অভিযোগ উঠেছে- পুলিশসহ শ্রমিক-মালিকদের অসংখ্য সংগঠনের নেতারা এগুলো থেকে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে অনিবন্ধিত অটোরিকশা সড়কে চলতে কোনো প্রতিবন্ধকতা হচ্ছেনা।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, চট্টগ্রাম শহর থেকে শাহ আমানত সেতু কিংবা কালুরঘাট সেতু পার হলেই মহাসড়কে দেখা মিলবে অনিবন্ধিত অসংখ্য সিএনজিচালিত অটোরিকশার। নগর ট্রাফিকের আওতাধীন হলেও শাহ আমানত ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে মইজ্যারটেক মোড়ে সব সময় কয়েক শত অটোরিকশার উপস্থিতি দেখা যায়। মইজ্যারটেক থেকে কর্ণফুলী থানার ব্রিজঘাট, বোর্ড বাজারসহ চরলক্ষ্যার বিভিন্ন ছোট ছোট সড়কে এসব অটোরিকশা প্রকাশ্যে চলাচল করে। আবার মইজ্যার টেক থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে বাঁশখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও কালুরঘাটের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে বোয়ালখালী, মনসারটেক, পটিয়া পর্যন্ত কয়েক হাজার অটোরিকশা চলাচল করছে। যার বেশিরভাগই অনিবন্ধিত। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের শান্তিরহাট মোড়ে কয়েক শত অটোরিকশা পুরো মহাসড়কের দুইদিক দখল করে রাখে প্রতিনিয়ত। হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শান্তির হাটে টিউটি করলেও মহাসড়কে বরাবরই অনিবন্ধিত অটোরিকশার দাপট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শান্তিরহাট থেকে আনোয়ারা, বুধপুরা বাজার, কাশিয়াইশ নয়াহাট, আশিয়া বাংলাবাজার পর্যন্ত এসব অটোরিকশা যাতায়াত করছে। আবার পিএবি (পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী) সড়কের চৌমুহনীতে কয়েক হাজার অটোরিকশার অবস্থান রয়েছে। ওই স্পটেই চারদিকেই সিএনজি অটোরিকশার জঞ্জাল। আনোয়ারার বিভিন্ন সড়ক বাদেও চন্দনাইশের বরকল ও বাঁশখালী সড়কে যাতায়াত করে এসব গাড়ি। ওদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের আমজুর হাট, পটিয়া বাসস্ট্যান্ড আনোয়ারা রাস্তার মাথা, বৈলতলী রাস্তার মাথা, কমল মুন্সির হাট, রওশন হাট, খাঁন হাট, গাছবাড়িয়া, বাগিচাহাট, দোহাজারী, কেরানির হাট, আমিরাবাদসহ মহাসড়কের প্রত্যেকটি পয়েন্টে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। এতে মহাসড়কের বড় যান চলাচলে সব সময় ব্যাঘাত ঘটছে। এসব পয়েন্টগুলোতে তৈরি হয় যানজটও। নানা সময়ে দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটছে।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, একটি সিএনজি অটোরিকশার প্রথমবারের নিবন্ধন ফি (ফিটনেস, ট্যাক্সটোকেনসহ) ১১ হাজার ৯৩৯ টাকা। রুট পারমিট প্রতি তিন বছরের জন্য এক হাজার ১০৪ টাকা। এরপর প্রতি বছর ফিটনেস ফি ৪ হাজার ১৮৭ টাকা ও ট্যাক্স টোকেন ২৩০০ টাকা করে। সেই হিসেবে গত ৮ থেকে ১০ বছরে এসব অনিবন্ধিত অটোরিকশায় সরকার অন্তত একশ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে। চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মইজ্যারটেক থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ অন্যান্য আঞ্চলিক সড়কগুলোতে অন্তত ২০ হাজার অনিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। একটি অটোরিকশা নিবন্ধন করতে (রুট পারমিটসহ) সাড়ে ১৩ হাজার টাকা লাগে। প্রতিবছর ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস নবায়ন করতে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়। স্থানীয় লোকাল টিআই, সার্জেন্ট, থানা ও ফাঁড়ির পুলিশদের সাথে মাসিক মাসোয়ারায় চলাচল করছে অনিবন্ধিত অবৈধ এসব গাড়ি। মাঝে মধ্যে চাপের মুখে অটোরিকশা আটক করলেও মোটা অংকের টাকা নিয়ে গাড়ি ছেড়ে দেয় হাইওয়ে পুলিশ। সিএমপির ট্রাফিক বন্দর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তারেক আহম্মেদ বলেন, কর্ণফুলী থানাটি সিএমপির অধীনে। তবে স্থানীয় লোকজন সিএমপির অধীনে বিষয়টি স্বীকার করতে চায় না। তারপরেও লোকজনকে অবগত করছি। আমরা অবৈধ অটোরিকশাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু মূলসড়ক থেকে এখনো শতভাগ অটোরিকশা সরানো সম্ভব হয়নি। আবার অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে রাজনৈতিক প্রভাবশালী লোকজন বাঁধা দেয়। এরপরেও অবৈধ কিংবা অনিবন্ধিত অটোরিকশাগুলোকে আর ছাড় দেওয়া হবে না।