অপরূপ প্রকৃতির লাল-সবুজ ফসলের মাঠে রঙিন লালশাক আর সরিষা রোপণ করে পরম মমতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও স্মৃতিসৌধ একেছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের কৃষক আব্দুল কাদির। ৩৫ শতাংশ জমির গোল বৃত্তের মধ্যে বড় করে বঙ্গবন্ধুর ছবি, একপাশে জাতীয় পতাকা, জাতীয় ফুল শাপলা আর মুজিব ১০০ বর্ষ। বঙ্গবন্ধুর ছবির নীচে আওয়ামীলীগের দলীয় নির্বাচনী প্রতিক নৌকার ছবি বাড়িয়েছে সৌন্দর্যের মাত্রা। লালশাক আর সরিষার চারাগুলো বড় হচ্ছে আর স্পষ্ট ও নান্দনিক হয়ে উঠছে বাংলাদেশের স্থপতির অবয়ব। যে বঙ্গবন্ধুকে দুচোখে দেখার ভাগ্য হয়নি সেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকেই ফসলের ক্ষেতে এমন শিল্পকর্ম বলে জানান কৃষক আব্দুল কাদির। সেই জমিনে পরম ভালোবাসায় বেড়ে উঠে শষ্য সেই জমিতে হৃদয় খচিত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে কৃষক আব্দুল কাদির নিজের জমিতে লালশাক ও সরিষা দিয়ে পরম মমতায় একেছেন জাতির জনকের প্রতিকৃতি, স্মৃতিসৌধ, নৌকা, শাপলা ও মুজিববর্ষ। শিল্পী কৃষকের সৌন্দর্যময় ফসলের মাঠ দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন নানান বয়সের মানুষ। কাদিরের শৈল্পিক কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি দেখতে ও ছবি তুলতে জমির পাশেই বাঁশ দিয়ে একটি সুউচ্চ টাওয়ার নির্মাণ করে দিয়েছে পাড়া খালবলা বন্ধু মহল ক্লাবের সদস্যরা।
গত বছরও নিজের স্ত্রী মকসুদা আক্তারের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে একই জমিতে ‘ভালোবাসার জমিন’ বানিয়েছিলেন এইকৃষক আব্দুল কাদির। ফসলের মাঠে "নকশি কাঁথা'' একে এলাকায় আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। এবার তার ভালোবাসার জমিনে লালশাক আর সরিষা দিয়ে আঁকলেন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য।
কৃষক আব্দুল কাদিরের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের পাড়া খালবলা গ্রামে। কৃষক তারা মিয়ার মেঝ ছেলে আবদুল কাদির। স্ত্রীর নাম মকসুদা আক্তার। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক চল্লিশোর্ধ্ব আবদুল কাদির পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবার হাত ধরে নিজেদের জমিতে শুরু করেন কৃষি কাজ। নানা টানাপোড়নে পরে আর পড়ালেখা হয়নি। মাঠেই দিন-রাত পরিশ্রম করে সোনার ফসল ফলান তিনি।
আব্দুল কাদির আরো বলেন, পাড়া খালবলা বন্ধু মহল ক্লাবের একজন উপদেষ্টা সদস্য আমি। ক্লাব সদস্যদের নিয়ে পরামর্শ করে গত ১ ডিসেম্বর নিজের ৩৫ শতক জমিতে বীজ বপনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় এই অনন্য শিল্পকর্ম। চারদিকে যখন ভাস্কর্য নিয়ে তোলপাড় চলছে সে সময় সরিষা ও লালশাক দিয়ে নিজের জমিতে পরম মায়ায় রূপ দেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। সঙ্গে একেছেন মুজিব শতবর্ষ, স্মৃতিসৌধ, শাপলা ও নৌকা। জমির চার দিকে রয়েছে চারটি ভালোবাসার নিদর্শন।
কৃষক কাদির বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালকে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষনা দিয়েছেন। শহর বন্দরে, টেলিভিশনে পত্রিকায় মুজিববর্ষ পালনের খবর শুনি আর দেখি। আমার তো আর সভা- সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের সুযোগ নেই। আমার কর্মক্ষেত্র আর ভালোবাসার স্থান ফসলের ক্ষেতেই বঙ্গন্ধুর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছি। আর্থিক লাভবান না হলেও দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন শৈল্পিক কাজ দেখতে আসার মধ্যেই আমি তৃপ্ত। তিনি বলেন, বছরের অন্য সময় জমি চাষ করে আর্থিক লাভবান হন। কিন্তু জাতির জনকের চেতনা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ভিন্ন কিছু করেছি।
পাড়া খালবলা বন্ধু মহল ক্লাবের সাধারণ সস্পাদক নাইমুল ইসলাম সোহেল বলেন, মুজিববর্ষের মধ্যে এক শ্রেনির মৌলবাদীরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে জাতীর জনককে অপমানিত করেছে এরই প্রতিবাদ স্বরূপ আমাদের এই প্রতিকৃতি। অন্যদিকে এই চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই এটি করা হয়েছে।
পাড়া খালবলা গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, সকাল বেলা যখন ঘুম থেকে উঠি দুর দুরান্ত থেকে নানা বয়সের মানুষ ফসলের মাঠে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি দেখতে ভীড় করে তখন আনন্দে বুকটা ভরে উঠে। কাদির এই জমিতে স্বাভাবিক ফসল করলে অনেক লাভবান হতে পারত কিন্তু সে তা না করে জাতিরজনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই প্রতিকৃতি তৈরী করেছেন। আজ সারা দেশের মানুষ এই পাড়া খালবলা গ্রামকে চিনে, আঠারোবাড়িকে চেনে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার জানান, কৃষক আব্দুল কাদির মানসিক সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন ফসলের মাঠে। তার কাজে কৃষি বিভাগ গর্বিত। তার অঙ্কিত জমিটিও সরকারের রাজস্ব বাজেটের সরিষার প্রদর্শনী মাঠ। এই ধরণের কাজে যদি কেউ উদ্যোগী হয় তাহলে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। আগামী বছরের বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকের জন্য তার নাম প্রস্তাব করা হবে বলেও জানান তিনি।