কুমিল্লায় যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমান হত্যা মামলা থেকে মহানগর যুবলীগ আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ নিয়াজ পাভেল ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম রিন্টুর নাম প্রত্যাহারের দাবী জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে দলের কুমিল্লা ইউনিটের শীর্ষ নেতারা। গতকাল কুমিল্লা ক্লাব অডিটরিয়ামে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আদর্শ সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক তারিকুর রহমান জুয়েল।
তিনি বলেন- গত ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৮-তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে কুমিল্লা মহানগরীর ২৫ নং ওয়ার্ডের পুরাতন চৌয়ারাবাজারে স্থানীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে জিল্লুর রহমান চৌধুরী জিলানী নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে, যা খুবই বেদনাদায়ক, ঘৃণ্যকর একটি ঘটনা। কুমিল্লা মহানগর আ’লীগ, মহানগর যুবলীগ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের পক্ষ থেকে এই হত্যাকান্ডটির তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য কুমিল্লা সদরের অভিভাবক সাংসদ বীরমুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার সর্বদা কাজ করে যাচ্ছেন। স্থানীয় সাংসদের নির্দেশে কুমিল্লার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, মৌলিক চাহিদা পূরণ ও দুযোর্গ সময়ে আমরা সকল শ্রেণির মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে জনহিতকর কাজ করছি।
তিনি আরো বলেন- আমরা হত্যা, চাদাঁবাজ, মাদক, কলহের বিরুদ্ধে। অথচ একটি ষড়যন্ত্রকারি গ্রুপ যারা সব সময় স্বাধীনতাবিরোধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকে, তারাই মহানগর আ.লীগের কর্ণধার ও মহানগর যুবলীগ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও আদর্শ সদর আ.লীগের নেতৃত্বকে কলুষিত করার জন্য জিল্লুর হত্যাকান্ডে জড়িত করেছে।
তারিকুল রহমান জুয়েল বলেন- মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ কেন্দ্রীয় যুবলীগের নির্দেশনা অনুযায়ী গত এক সপ্তাহ ধরে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার সময় আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ ভোর থেকে মহানগর আ.লীগের পার্টি অফিসে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর নানান আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলায় জড়িত করা নেতৃবৃন্দসহ যারা ওই মামলার বিষয়ে নানা রকম কুটকৌশলে লিপ্ত সকলের মোবাইল ট্র্যাকিং ও ভয়েস রেকর্ড সংগ্রহের মাধ্যমে ওই ঘটনায় প্রত্যেকের অবস্থান ও তাদের সম্পৃক্ততা নিরূপণের জোর দাবি জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন- আফজল খান ও তার ছেলে-মেয়ে খুনী এবং সন্ত্রাসীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা। বিগত সময়ে তারা বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। তাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ শংকর, হামিদ, টিটু, জালাল, সাইফুল হত্যাকান্ডসহ নানা অপকর্মে জড়িত। ইমরান হত্যা ও অস্ত্র মামলায় জড়িত ছিলেন এবং অস্ত্র মামলায় ২০০৭ সালে ২০ বছরের কারাদ-প্রাপ্ত হন। কুমিল্লা শহর ছাত্রলীগের সভাপতি এম সাইফুল ইসলাম প্রধানের হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারি ও প্রধান আসামি এই ইমরান খান। আফজল খানের ছেলে আরমান খান দেবিদ্বার পৌর যুবলীগের সহ-সভাপতি টিটুকে বন্ধুত্বের সুযোগে হত্যা করে নগরীর ঠাকুরপাড়ার পরিত্যক্ত বাড়ির সেফটি ট্যাংকে গুম করে। তার বোনকে সংরক্ষিত আসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি বানানোর পর সে আবার অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মহরা দিয়ে নানারকম অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। কথিত আছে যে, আফজল খান দৌলতপুরের হামিদের জমিতে ব্রিকফিল্ড বানিয়ে পরবর্তীতে জমির দখল না ছেড়ে নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে হত্যা করে। জায়গা দখলে চ্যাম্পিয়ন খাঁন পরিবারের অত্যাচারে বহু সংখ্যালঘু পরিবার কুমিল্লা ছেড়ে চলে গেছে বলে কথিত আছে। হত্যা রাজনীতিতে সেরা পরিবারই আজ ষড়যন্ত্রের খেলায় মেতে উঠেছে।
জুয়েল বলেন- আমরা সন্দেহ করছি হত্যা মামলা সৃষ্টি করে রাজনীতির ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় কেউ ওই হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে। কারণ হত্যাকান্ডটি ঘটেছে সকাল সাড়ে ৭ টায়। তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণার পর প্রায় সাথে সাথে কান্দিরপাড়ে ইমরান খানের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক ডিজিটাল ব্যানারসহ একটি মিছিল করে। এতেই বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত বলে প্রতীয়মান হয়।
তিনি বলেন- মামলা দায়েরের প্রায় ১৪ ঘন্টা আগে সীমা ও ইমরান খান প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনে মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদের নাম উল্লেখপূর্বক নানা প্রকার মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করে যা ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বলে প্রমাণিত হয়। এ ছাড়া মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জহিরুল হক রিন্টু ও আদর্শ সদর উপজেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমেদ নিয়াজ পাভেলকে এই হত্যাকান্ডে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়িয়েছে, যা অবশ্যই নিন্দনীয়।
তিনি বলেন-কুমিল্লায় যতগুলো রাজনৈতিক হত্যাকান্ড হয়েছে প্রায় সবগুলিই এই পরিবার করেছে। রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নেওয়ার পর তারাই তাদের কর্মীদের খুন করে। কুমিল্লা নগরীর বহুল আলোচিত সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মাসুদ পারভেজ খান ইমরান মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা নিহত জিল্লুর রহমান জিলানীর হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্ত চাই। প্রশাসন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রতি সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি এই হত্যাকান্ডের মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার ও যথাযথ মামলা দায়ের এবং সঠিক তদন্ত করে মূল ঘাতকদের চিহিৃত করেন। এই হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার দাবি করছি। প্রশাসনের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আশা করি হত্যাকান্ডের সঠিক রহস্য উন্মোচন হবে বলেও তিনি জানান। এ সময় মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও কাউন্সিলর হাবিবুর আল আমিন সাদী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান পিয়াস, যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বোরহান মাহমুদ কামরুলসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে কান্দিরপাড়ে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় কুমিল্লার সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরাসহ আওয়ামী লীগ ও অংগসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।