লালমনিরহাটের পাটগ্রামে নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এ- কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক আবু ইউসুফ মোঃ সহিদুন্নবী জুয়েলের হত্যাকান্ডের শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেনা রংপুরবাসি ও স্বজনরা। হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে উত্তাল এখন নগরবাসি। এ সময় জুয়েল হত্যার দ্রুত বিচার চেয়ে ৪ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে অংশগ্রহণে শোকাবহ মিছিল নিয়ে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজির নিকট স্মারকলিপি পেশ করা হয়। কর্মসূচীতে সর্বস্তরের হাজারো জনগণসহ নিহত জুয়েলের বড় বোন ও স্ত্রী জেসমিন আখতার ছাড়াও পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জুয়েলের মহল্লার সকল দোকান পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। কর্মসূচীতে মহল্লার অন্তর্গত ইন্দ্রারার মোড়, শালবন, পূর্ব শালবন, আরসিসিআই মোড়, মিস্ত্রীপাড়া, শিয়ালুর মোড়, খেরবাড়ি ও বৈশাখী ক্লাব বোতলা এলাকার সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
শোকাবহ বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নগরীর কাছারী বাজারে পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। সেখানে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শালবন এলাকাবাসীর পক্ষে অ্যাডভোকেট জোবায়দুল ইসলাম বুলেটসহ অনেকেই।
বক্তরা ৪ দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নিহত আবু ইউনুছ মো. সহিদুন্নবী জুয়েলকে ধর্মঅবমাননার অপবাদ থেকে আনুষ্ঠানিক দায়মুক্তির ঘোষণা দিতে হবে। অবিলম্বে সকল হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। হস্তক্ষেপমুক্ত, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের স্বার্থে সহিদুন্নবী জুয়েলের হত্যার বিচার কাজ স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে সম্পন্ন করতে হবে এবং জুয়েল এর স্ত্রী-সন্তানদের শিক্ষাজীবনসহ সকল দায়িত্ব ওপ রিবারের ভরণপোষণ রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, স্থানীয় প্রশাসন জুয়েলকে রক্ষা করতে চরম ভাবে ব্যার্থ হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ঘটনার মুল আসামি হোসেন আলীসহ যারা তার লাশ পুড়িয়েছে তাদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। এ ঘটনায় প্রশাসনের চরম দায়িত্বহীনতা কাজ করেছে। সে কারণে যারা দায়ি তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। জুয়েল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়তো। তার মতো ধার্মিক ও নিরাপরাধ ব্যাক্তিকে পিটিয়ে তাকে জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করলো। ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। মামলার সাক্ষীদের নানা ভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। সে কারণে আমরা মনে করি মামলাটি লালমনিরহাট থেকে রংপুরে এনে এখানেই বিচার করতে হবে।
ঘেরাও চলাকালে ডিআইজির অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ মিজানুর রহমান শাফি স্মারক লিপি গ্রহণ করে বলেন ওই ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার নিজেই মনিটরিং করছেন। এ পর্যন্ত ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ মামলায় কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। পরে মিছিলকারীরা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ঘেরাও করলে বিভাগীয় কমিশনারের অনুপস্থিতিতে স্মারক লিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু তাহের মোঃ মাসুদ রানা। তিনি এ জঘন্য হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে সার্বক্ষনিক মনিটারিং করার কথা জানিয়েছেন। নিহত জুয়েলের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।