খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় প্রবাহ মান হরি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম গোলদারের বিরুদ্ধে। তিনি উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়ানের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদের পাড়ে ভাঙন দেখা দেওয়া আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাড় ভাঙলে শতাধিক কৃষকের জমি নদীতে বিলিন হয়ে যাবে। সেকারণে ক্ষোভ প্রকাশ করছে এলাকার সাধারণ মানুষ। এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রুদাঘরা গ্রামের ১ কিলোমিটার দীর্ঘ গোলদার বাড়ি ঘাট সড়কটি পাকা করণের কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশর অধিদপ্তর (এলজিইডি) অর্থায়নে সড়কটি পাকা করণের কাজ পেয়েছেন খুলনার দিঘলীয় উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুমনা এন্টার প্রাইজের মালিক মোঃ রাসেল। তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন স্থানীয় ব্যক্তি মো. নাজমুল। নির্মানাধীন সড়কে বালু সরবরাহের ঠিকাদারি নিয়েছেন আ'লীগ নেতা আবুল কাশেম গোলদার। তিনি ৮ দিন ধরে বালু উত্তোলন করছেন। সড়ক থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে হরি নদের থেকে স্যালো মেশিন দিয়ে তৈরি ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে সরাসরি সড়কে দিচ্ছে। এরজন্য তিনি প্রশাসনের কোন প্রকার অনুমতি নেননি বলে জানা গেছে। নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় পাড়ে ছোট ছোট ভাঙন দেখা দিয়েছে। এভাবে বালু উত্তোলন করতে থাকলে দ্রুত নদীর পাড়ে বড় ধরণের ভাঙ্গন দেখা দেবে। তখন নদীর পাড়ের শতাধিক কৃষকের জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশংখা রয়েছে। সরেজমিনে যেয়ে দেখা গেছে, মাঝ নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সেই বালু পাইপের মাধ্য সড়কে এনে ফেলা হচ্ছে। এই সময় বালু উত্তোলনকারী ড্রেজারের মালিক আছাদুল গাজীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের বালু তুলার জন্য চুক্তি হয়েছে আবুল গোলদারের (আবুল কাশেম গোলদার) সাথে। তার কথাতে আমরা বালু তুলে দিচ্ছি। এ সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে তার (আবুল গোলদারের) সাথে কথা বলেন'। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, এভাবে বালু তুলতে থাকলে খুব শিঘ্রই নদীতে ভাঙন শুরু হবে। তখন কৃষকদের সর্বশান্ত হতে হবে। আর নদী থেকে যে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তা বেশি ভাগই পলিকাঁদা। এই বালু দিয়ে কাজ করলে অল্প দিনেই সড়কটি নষ্ট হয়ে যাবে। পানিতে যাবে কোটি টাকা। আর এলাকাবাসীর দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। তারা আরো বলেন, সড়কে বালু দেওয়ার ঠিকাদারি নিয়েছেন আবুল কাশেম গোলদার। তিনি মসজিদ কমিটির নামে কাজ চালিয়ে দিচ্ছেন। যাতে কোন সমস্যা না হয়। কেউ যেন এর প্রতিবাদ করতে না পারে। তিনি এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় জেনে-শুনে এলাকার মানুষ এই অন্যায় মেনে নিচ্ছে। বরুনা এলাকার বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে দ্রুত নদীর পাড়ে ভাঙন শুরু হবে। তখন নদীর পাড়ের কৃষি জমির বিলিন হবে। সর্বশান্ত হবে প্রায় শতাধিক কৃষক। দ্রুত এটি বন্ধ হওয়া উচিত।
আবুল কাশেম গোলদার বলেন, আমি এই কাজের মধ্যে জড়িত নই। সড়কের পাশে একটি মসজিদ (গোলদারবাড়ি জামে মসজিদ) রয়েছে সেই মসজিদ কমিটির কয়েকজন মিলে এই কাজ করছে। আমি ওই মসজিদ কমিটির কেউ না। এই কাজ থেকে যে লভ্যাং হবে তা মসজিদ কমিটি নেবে। গোলদারবাড়ি জামে মসজিদের সভাপতি ও এলজিইডি খুলনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জহুরুল হক গোলদার বলেন, মসজিদ কমিটি এ রকম অন্যায় কাজ করতে পারে না। এ কাজের সাথে মসজিদ কমিটি কোন ভাবেই জড়িত নয় তাহলে আমি জানতাম। মসজিদ কমিটি নাম ব্যবহার করে কেউ সুবিধা নিচ্ছে। রাস্তার কাজ বাস্তবায়নে নিযুক্ত ঠিকাদার মো. নাজমুলের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।এলজিইডি ডুমুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, ১ কিলোমিটার সড়কটি পাকা করণের জন্য প্রায় ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। বালির বিষয়ে আমি অভিযোগ পেয়েছি। এখন বালুর নমুনা এনে পরীক্ষা করে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ শাহানাজ বেগম বলেন, নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে আমার জানা নেই। এ কাজ যদি কেউ করে তবে তা বেআইনী। আমি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবো।