পাবনার চাটমোহরে চিকনাই নদীর উপর গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বানালেন ৫৫০ ফুটের বাঁশের সেতু। সেতুটি নির্মাণে গ্রামের কেউ দিয়েছেন বাঁশ,কেউবা বাঁশ কেনার টাকা। পুরো গ্রামবাসী প্রায় একমাসের স্বেচ্ছাশ্রমে নদীর ওপর তৈরি করলেন অস্থায়ী বাঁশের সেতু। এই সেতু তৈরির ফলে দীর্ঘদিনের জনদুর্ভোগ লাঘব হলো ১২টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের।
উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের কাটাখালি কান্দিপাড়া এলাকায় চিকনাই নদীর ওপর নির্মিত এই বাঁশের সেতু তৈরির কৃতিত্ব পুরো গ্রামবাসী।
এই নদীর উপর জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীদের মধ্যে।
জানা জানা যায়,চাটমোহর উপজেলার শেষ সীমানায় নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার সীমানায় লাগোয়া কাটাখালি কান্দিপাড়া গ্রামটি। এই চিকনাই নদীর ওপারেই একই উপজেলার আরেকটি গ্রামের নাম ‘খৈরাশ’।
বর্ষাকাল এলেই খৈরাশ গ্রামটি উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ওই গ্রামে প্রবেশের নেই কোনো পাকা সড়ক। এই দুই গ্রামের আশেপাশেই ঘিরে রয়েছে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ও চান্দাই ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। তাদের যোগাযোগ বেশিরভাগ চাটমোহর কেন্দ্রিক। ওই এলাকায় রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ব্যবসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। কান্দিপাড়া (কাঠগড়া ব্রিজ) এলাকায় চিকনাই নদীর ওপর কোনো সেতু না থাকায় জনদুর্ভোগের শিকার হয়ে থাকেন লক্ষাধিক মানুষ। বর্ষাকাল এলেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিঙি নৌকায় নদী পারাপার হয়ে থাকেন সবাই। এ ছাড়া ওই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই থাকেন কৃষক কাজে নিয়োজিত। যানবাহনের অভাবে মাঠ থেকে ফসল আনা-নেয়া করা বা কেউ অসুস্থ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সে নিতে পারেন না। অসুস্থ রোগীদের পল্ল¬ী চিকিৎসকরাই একমাত্র ভরসা। জনপ্রতিনিধিদের কাছে দীর্ঘদিন এলাকাবাসী সেখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে এলেও শুধু আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি।
এমতাবস্থায় গত একমাস আগে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্থানীয়রা বসে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। স্বেচ্ছাম্রমে এগিয়ে আসেন সরকারি চাকরিজীবী,শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গ্রামের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বাদ যাননি নারীরাও। তারাও সাধ্যমতো সহযোগিতা করেন সেতু নির্মাণ কাজে।
কান্দিপাড়া গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন,‘ছোটবেলা থেকেই শুনেছিলাম কাঠগড়া এলাকায় ব্রিজ নির্মাণ হবে। বড় হয়েছি। কিন্তু ব্রিজ আর হলো না। কবে হবে,তাও জানিনা।’ এমপি, চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে অনেকের কাছেই ধর্ণা দিয়েছি। কিন্তু সেতু নির্মাণ হয়নি! শেষে আমরাই নিজেদের টাকা আর স্বেচ্ছাশ্রমে ৫৫০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সেতু বানিয়েছে।
ডিবিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবীর উদ্দিন মোল্ল¬া বলেছেন,সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে বহুবার বিভিন্ন দফতরে গিয়েছি। আমিও আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাইনি। তবে এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা প্রকৌশলি মো. রাজু আহম্মেদ বলেছেন,আমি ওই এলাকা পরিদর্শন করে সেখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছি। প্রকল্প অনুমোদন হলে খুব শিগগিরই সেখানে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে।