রংপুরের পীরগাছার কল্যাণী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নুর আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম এবং দলীয় ও ইউপি অংশের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করছেন ওই ইউনিয়নের সভাপতি সোহবার হোসেন ও একাধিক ইউপি সদস্য। অভিযোগটি বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান নুর আলম ২০১৬ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানা দুনীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও বিভিন্ন অনিয়মের জড়িয়ে পড়েন। তিনি ইউনিয়নবাসীর স্বাস্থ্য সেবা লক্ষে এ্যাম্বুলেন্স ক্রয়ের জন্য ৪০ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বিক্রি করেন। ওই টাকায় নতুন এ্যাম্বুলেন্স না কিনে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায় একটি পুরাতন মাইক্রোবাস ক্রয় করে ১০ লাখ টাকা খরচ দেখান। বাকি টাকাও তিনি বিভিন্ন খাতে ভূয়া খরচ দেখিয়ে আত্মসাত করেন। তিনি করোনা কালীন সময়ে অসহায় মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ২ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ গ্রহনে তালিকা তৈরিতে অনিয়ম ও উৎকোচ গ্রহন করেন। এদিকে তিনি দরিদ্র মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি দেয়া ঘর বরাদ্ধে প্রকৃত দরিদ্রদের না দিয়ে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে গ্রহন ঘর করে দেন। তার বিরুদ্ধে ইউনিয়নে শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ৪ হাজার একশ পরিবারে নিকট থেকে নির্ধারিত ৬৫০ টাকা পরির্বতে ৪ হাজার টাকা করে গ্রহন, টিআর-কাবিটা, কাবিখা, এডিপি-এলজিএসপি প্রকল্পে ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাত করেন। প্রতি বারেই তিনি একই প্রকল্প দেখিয়ে অনিয়ম করেন থাকেন। এছাড়াও তিনি ইউনিয়নের ভোটার ও সাধারন মানুষের সাথে দুব্যবহার, মামলা দিয়ে হয়রানি ও ত্রাণ চাওয়ায় অসহায় মানুষকে মারপিটের অভিযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে সুবিধাভোগীদের মাঝে ত্রাণ বিতরনে কমিটি গঠন করা হলেও তিনি এসব কমিটিতে তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়ালখুশি মত নিজস্ব লোকদের ত্রাণ দিয়ে থাকেন। সেখানেও তিনি কমিশন নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগকারীরা দাবি করেন। তিনি দলের ভাবমুর্ত্তি ক্ষুন্ন করে ও দলীয় নেতাকর্মীদের মতামত গ্রহন না করে নিজের খেয়ালখুশি মত কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। ফলে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভসহ মিশ্রপ্রতিক্রিয়া। তার এসব অনিয়ম, দুনীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, নির্যাতন ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ফুঁেস উঠছে ইউনিয়নবাসী।
ওই ইউনিয়নের ভুক্তভোগী বিষনু চন্দ্র বলেন, আমি গরীব মানুষ। অতিকষ্টে সকল প্রক্রিয়া শেষে সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য একটি গভীর নলকুপ স্থাপন করে চাষাবাদ করে আসছিলাম। সেচকাজ চলাকালীন সময়ে চেয়ারম্যান তার নিজস্ব পেটোয়া বাহিনী দ্বারা গোলযোগ সৃষ্টি করে সেচ ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে তিনি নিয়মনীতি না মেনে অর্থের বিনিময়ে কাজল ও সুবল নামে দুজনের নামে হস্তান্তর করেন। আরেক ভূক্তভোগী বিট্রিশ চন্দ্র বলেন, আমি করোনাকালে চেয়ারম্যানের নিকট ত্রাণ চাইতে গেলে তিনি আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন।
এসব বিষয়ে ওই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য জালাল উদ্দিন বলেন, চেয়ারম্যানের বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তিনি আমাকেও হুমকি-ধামকিসহ নানা ভাবে হয়রানি করছেন। আমার নামে ষড়যন্ত্র মূলক অভিযোগ দায়ের করে অনাস্থা আনেন। যা তদন্তে মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। আমি আশা করি, ইউনিয়নবাসীর স্বার্থরক্ষায় এসব অনিয়ম-দুনীতি বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসবেন।
অভিযোগকারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান দলীয় ভাবে নির্বাচিত হলেও তার এসব কর্মকা-ে দলীয় ভার্বমুত্তি নষ্ট হচ্ছে। দল ও জনগণের কথা বিবেচনা করে তার এসব অনিয়ম তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান নুর আলম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি না বুঝেই অভিযোগ করছেন। তিনি সভাপতির দায়িত্ব কি তাও বোঝেন না।
এ ব্যাপারে পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমীন প্রধান বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে স্থানীয় ভাবে তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক বরাবরে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি সেখান থেকেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।