‘আমার পেটে জীবনের বাচ্চা। আমি তো বেঁচে থাকতে ওর বিচার করতে পারলাম না। মরার পরে যেন কঠোর বিচার হয়” মৃত্যুর পুর্বে উপর্যুক্ত কথা স্ইুসাইড নোটে লিখে প্রায় দুই মাসের অন্তঃস্বত্তা এক স্কুল ছাত্রী নিজ ঘরে বাঁশের আড়ার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
ঘটনাটি সোমবার (১৫ জুন) সকাল ৭ টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়ের চর নিতাইল পাড়ার পূর্ব পাড়াতে ঘটে।
ছাত্রীর নাম সোনিয়া খাতুন (১৬)। সে শালঘর মধুয়া হাজী আছিয়া খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনির ছাত্রী এবং নিতাইল পাড়ার সুফিয়া খাতুনের কন্যা।
সরেজমিন গেলে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, একই এলাকায় জহুরুল হাজীর কলেজ পড়ুয়া ছেলে জীবন (২০) এর সাথে সোনিয়ার গোপনে বছর খানেক ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। এরমাঝে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তারা। সম্পর্কের একপর্যায়ে সোনিয়া দুই মাসের অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়লে বিয়ের জন্য চাপ দেয় জীবনকে। এরপর গত শনিবার দুই জন পালিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাগপত্র গুছিয়ে রাখে সোনিয়া। কিন্তু জীবন পালাতে রাজী না হওয়াই গতকাল রোববার সন্ধায় জীবনের বাড়িতে যায় সোনিয়া। বাড়িতে গেলে জীবনের মা বাবা বোন মিলে সোনিয়াকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। সোনিয়া বাঁশগ্রাম পুলিশ ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেয় এবং পুলিশ সোনিয়াকে বাড়ি পৌছে দিয়ে মিমাংশার কথা বলে। কিন্তু সোমবার সকাল ৭ টার দিকে সুইসাইড নোট লিখে নিজ ঘরে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সোনিয়া।
নিহতের মা সুফিয়া খাতুন জানান, জীবনের সাথে গোপনের সোনিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জীবনের বাড়িতে গেলে ওরা মারধর করলে ক্যাম্পে যায় সোনিয়া। পরে পুলিশ সোনিয়াকে বাড়ি পৌছে দেয়। তিনি আরো জানান, রাতেই সোনিয়া কাছ থেকে জানতে পারলাম ওদের শারীরিক সম্পর্ক ছিল এবং সোনিয়া দুই মাসের অন্তঃস্বত্তা। তবে মেডিকেল টেস্ট করানো হয়নি। সুফিয়া জানান, আমার মেয়ে বাবা হারা। অনেক কষ্টে বড় হয়েছি।ও র সাথে যারা খারাপ কিছু করেছে,তাদের কঠোর বিচাই চাই।
এবিষয়ে বাঁশগ্রাম পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রেজাউল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, মেয়েটি ক্যাম্পে এসে তার এক ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কের কথা জানিয়ে বলে আমি বাড়ি গেলে পরিবারের লোকজন মারবে। এমন কথা শুনে আমরা বাড়ি পৌছে দিয়েছি।ত বে লিখিত অভিযোগের কথা অস্বীকার করেন ইনচার্জ।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে চৌরঙ্গী তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইনস্পেক্টর রাকিব জানান, ‘আমার পেটে জীবনের বাচ্চা। আমি তো বেঁচে থাকতে ওর বিচার করতে পারলাম না। মরার পরে যেন ওর কঠোর বিচার হয়’। এমন আবেগঘন অসংখ্য কথা সুইসাইডে লিখে আত্মহত্যা করে সোনিয়া।
কুমারখালী থানার ওসি কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান,সুইসাইড নোট লিখে মেয়েটি ফাঁশ লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তদন্তের স্বার্থে সুইসাইড নোটসহ একটি ডায়েরী জব্দ করা হয়েছে এবং সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকেই জীবনসহ তার পরিবারের সকল সদস্যরা পলাতক রয়েছে।