পীরগঞ্জে বিষাক্ত রেক্টিফায়েড স্পিরিট (এইট-টি-মাদকদ্রব্য) পানে ৩ মাদক ব্যবসায়ী, এক আ.লীগ নেতাসহ ৬ জন মারা গেছে। আরও ৫ জনের অবস্থা আশংকাজনক। ঈদুল ফিতরের পর ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানেই ৫ জন মারা গেছে। উপজেলার শানেরহাট ইউনিয়নের সানেরহাট নামকস্থানে ওই ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার পুলিশের সার্কেল-ডি’র এএসপি আরমান হোসেন ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়ে ২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছেন। এলাকাবাসী ও মৃত এবং অসুস্থদের পারিবারিক সুত্র জানায়, উপজেলার শানেরহাট ইউনিয়নের শানেরহাট বাজারে আবদুর রাজ্জাক, নওশা মিয়া এবং দুলা মিয়া দীর্ঘীদন ধরে নিয়মিত রেক্টিফায়েড স্পিরিট বিক্রি করে আসছে। ইউনয়নটির চেয়ারম্যানসহ প্রশাসন এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ১ মাস পুর্বে খোলাহাটি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাককে পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে থেকেই রাজ্জাক তার রেক্টিফাইড স্পিরিটের পাত্রগুলো মাটিতে পুঁতে রেখেই মাদক বিক্রি চালিয়ে আসছিলো। গত ১৯ মে জামিনে এসে আবদুর রাজ্জাক ঈদের সুযোগে মাটিতে পুতে রাখা রেক্টিফায়েড স্পিরিটগুলো আবারও বিক্রি শুরু করে। ঈদের ৪ দিন আগে মেস্টা গ্রামের মাদক ও সুদখোর ব্যবসায়ী নওশা মিয়া (৫৫) মারা যায়। এরপর ঈদের চাঁদরাত উপলক্ষ্যে আবদুর রাজ্জাকসহ এলাকার বেশ কয়েকজন শানেরহাটের একটি পরিচিত হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে স্পিরিট পান করে। এতে ঈদের দিন সকাল ১১টায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সেলিম মিয়া (৫০), রাত দেড়টায় মাদক ব্যবসায়ী রায়তি সাদুল্লাপুরের দুলা মিয়া (৫২), ঈদের পরদিন সকালে মাদক ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক (৪৫), ওইদিন বিকেল ৩টায় ছোট পাহাড়পুরের জাইদুল ইসলাম (৩৫) এবং শানেরহাটের পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুর উপজেলার বাজিতপুরের চন্দন কুমার (৩০) বিকেলে মারা যায়। অপরদিকে গ্রেফতার এড়াতে মারাত্মক অসুস্থ মাদকসেবী ধল্লাকান্দি গ্রামের আকবর আলী (৪৫), আবদুল খালেক (৫০), ডিশ মতি (৩৫), রবিউল ইসলাম (৩৫), কাজীরপাড়ার খোড়া শাহীন (৪০) গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার অসুস্থদের বাড়ীতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। অসুস্থদের সবাই দৃষ্ঠি হারিয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় শানেরহাট এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে ইউনিয়নের পবনপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ঘুঘু বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান মাদক-জুয়া বন্ধে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। ইউনিয়নটি মাদক মুক্ত হলেও শানেরহাটের ৩/৪ জনকে কোনভাবেই বিরত রাখা যায়নি। নাম প্রকাশে একাধিক জনপ্রতিনিধি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশকে অবগত করা হলেও এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মৃত্যুর ঘটনায় বর্তমানে পুলিশ দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। শানেরহাট ইউপি’র চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রেক্টিফায়েড স্পিরিট পানে ৬ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমি না জেনেই মৃতদের একজনের জানাযায় গিয়েছিলাম। রংপুর পুলিশের সার্কেল ডি’র এএসপি আরমান হোসেন পীরগঞ্জ থানার ওসিসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা মাদক ব্যবসায়ী মৃত. রাজ্জাকের স্ত্রী পারভীন বেগম এবং তার জামাতা হাজীপুরের মহসিনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। ওসি সরেস চন্দ্র বলেন, শানেরহাটে ৬ ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় ২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। এএসপি আরমান হোসেন, বলেন, মাদকের ব্যাপারে রংপুরের পুলিশ জিরো টলারেন্স। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দোষীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।