মরণব্যাধী করোনার সংক্রমণ এড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে সরকার। সরকারের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে এসব নির্দেশনা পালনে একটু বেশি তৎপরতা ও আন্তরিকতা দেখা গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী আফরিদার। একজন নারী কর্মকর্তা হয়েও সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটে চলেছেন উপজেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
জনগণকে সচেতন করা, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষের খোঁজ-খবর রাখছেন তিনি। এরইমধ্যে তাঁর এসব কর্মকান্ডের কারণে ‘মানবিক” ইউএনও হিসেবে আখ্যা পেয়েছেন রাণীশংকৈলবাসীর কাছে। উপেজেলার গন্ডি পেরিয়ে সব মহলে তিনি এখন ‘মানবিক’ এক নারী হিসেবে পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
অনেকের মতে, প্রশাসনিক অন্যান্য পুরুষ কর্মকর্তার চেয়ে নারী কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর কর্মকাণ্ড প্রশংসনীয় এবং দৃশ্যমান। জানা গেছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন এবং হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছুটে চলছেন তিনি।
কোথাও কোন রকম আইনের ব্যত্যয় ঘটলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানাও করছেন তিনি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন হোম কেয়ারেন্টাইন আইন ভঙ্গকারী প্রবাসীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছেন। করোনা ভাইরাসকে পুঁজি করে অসাধু ক্রেতারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। এজন্য উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাজার নজরদারি করে জরিমানাও করেছেন অসাধু দোকানীদের বিরুদ্ধে।
এদিকে, ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে হাট বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন বন্ধ রাখর ঘোষণা দেয় সরকার। এতে বিপাকে পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের কথা চিন্তা করে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন মানবিক এ কর্মকর্তা। নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। নিজ হাতে অসহায়দের মাঝে তুলে দিয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী।
এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, হাট-বাজার বন্ধ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে খেটে খাওয়া ও অসহায় মানুষগুলো। তাদের একজনের রোজগারে পুরো পরিবার চলতো। এখন তাদের উপার্জন বন্ধ। এজন্য সাধ্য অনুযায়ী আমি তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি।
এছাড়া সচেতনতার পাশাপাশি লোকজনের মাঝে মাস্কও বিতরণ করেছেন তিনি। করোনা প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের কারণে সমস্ত দেশ জুড়ে সকল মানুষের উন্মুক্ত চলাফেরাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া অন্যান্য দোকান পাট ও অফিস আদালত বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে শ্রমজীবিসহ দরিদ্র মানুষেরা। সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী কর্মহীন শ্রমজীবি দরিদ্র মানুষদের ত্রাণ বিভাগের সহায়তায় খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন রাণীশংকৈল উপজেলা প্রশাসন এরই অংশ হিসাবে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজার প্রাঙ্গণে দিন মজুর, ভ্যান চালক, চা ব্যবসায়ী, প্রতিবন্ধি সহ বিভিন্ন পেশার দরিদ্র নারী, পুরুষ শ্রমজীবিদের মাঝে শুকনো খাবার, চাল, ডাল, আলু তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী আফরিদা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী আফরিদা বলেন, সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নের কর্মহীন শ্রমজীবি মানুষদের পর্যায়ক্রমে শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে। অন্যদিকে, মরণব্যধি এ অদৃশ্য ঘাতকের থাবার বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ দেন তিনি। প্রশাসন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা মেনে চলে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপজেলাবাসীর উদ্দেশ্যে সাংবাদিকদের মাধ্যমেও তিনি বলেন, ‘প্রিয় রাণীশংকৈল, আপনাদের কল্যাণার্থেই কাজ করে যাচ্ছি। সকাল অবধি রাত পর্যন্ত বাইরে কাটাচ্ছি আপনাদেরই জন্য। চাইলেও ঘরে থাকতে পারছি না। রাণীশংকৈল উপজেলার উত্তর প্রান্ত থেকে ফোন আসেতো দক্ষিণ প্রান্ত থেকে মিনিটেই। আমার একজনের পক্ষে পুরোটা কাভার করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। আপনারা যে যার অবস্থান থেকে কাজ না করলে এ অঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখা অসম্ভব হবে। কোনো ঝামেলা থাকলে অবশ্যই আপনার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বারকে আগে জানাবেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে চেয়ারম্যান করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি। এছাড়াও ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ অভিযানে চালাচ্ছে। আমাদের প্রদত্ত নির্দেশনাসমূহ মেনে চলুন, এটাই হবে আপনাদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সহযোগিতা। একান্ত অত্যাবশকীয় না হলে ঘর থেকে বের হবেন না। নির্দেশনার ব্যত্যয় হলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপ-সহকারি প্রকৗশলী মোঃ তাজ উদ্দীন বলেন- বরাদ্দ ৪৪দশমিক ৬৩৩ মেঃটন ১৮৬৪ প্যাকেট, ১০কেজি চাল,২কেজি ডাল,৫কেজি আলু এ পর্য়ন্ত বিতরণ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ক্রীড়া বীদ অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম বলেন, জনসেবার জন্য প্রশাসন।” এই দূর্যোগ মুহুর্তে নারী ইউএনও হিসাবে তিনি প্রশংসার দাবিদার।