অটোরিকশা চালক শফিকুল ইসলাম সেজু (২২)। মা, ছোট ভাই, স্ত্রী, সন্তানসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার চালাতে হয় তাকে। সেই কাকডাকা ভোরে বের হন সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে। ঘরে ফেরেন রাতে। সব খরচ বাদে দিনে আয় ৪শ থেকে ৫শ টাকা। ওই টাকায় সংসার চলে তার। কিন্তু গত ২৬ মার্চ থেকে তার এ আয় বন্ধ রয়েছে। করোনার সংক্রমণ রোধে সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। তাই কর্মহীন হয়ে তার আয়ের পথ বন্ধ রয়েছে।
শুধু সেজু নয়, তার মত শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে প্রায় দুই হাজার চালকের আয়ের পথ বন্ধ রয়েছে। এরা সবাই বাস, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ট্রলি (শ্যালো ইঞ্জিন চালিত) গাড়ির চালক।
অটোরিকশা চালক শফিকুল ইসলাম সেজু বলেন, ‘দিন আয় করে, দিন খাই। গাড়ি বন্ধ থাকায় চোখে আন্ধকার দেখছি। সংসার চালাতে পারছি না। করোনা আসায় আমাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এ মুহুর্তে সরকারের সহায়তা পেলে ভাল হতো।’ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক জহুরুল বলেন,‘কদিন গাড়ি চালাতে পারছি না, আয়ের পথ বন্ধ বন্ধ। কিভাবে যে চলবো, কিছু বুঝছি না।’
ঝিনাইগাতী অটোটেম্পু-অটোরিকশা চালক সংগঠনের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রজব জানান, এ উপজেলায় সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে প্রায় এক হাজার। গত ছয়দিন ধরে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এসব গাড়ির চালকদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে অনেকের পরিবারে অশান্তি দেখা দিয়েছে।
ট্রলি চালক সংগঠনের নেতা হাবিবুল্লাহ জানান, এ উপজেলায় ট্রলি (শ্যালো চালিত ইঞ্জিন) গাড়ি আছে কমপক্ষে ৭০টি। এ গাড়ি চালকরা, গাড়ি চালিয়েই সংসার চালান। গাড়ি বন্ধ থাকায় তাদের চলতে কষ্টে হচ্ছে।
ট্রাক মিনিট্রাক ট্যাংকলরী ও কাভার্ডভ্যান চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. নুহু মিয়া জানান, তাদের সংগঠনে চালক ও শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে ৬শ। সারাদেশে সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ থাকায় তাদেও গাড়িও বন্ধ রয়েছে। ফলে চালক ও শ্রমিকদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে পড়েছে।
শেরপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি-১৫৪৮) ঝিনাইগাতী শাখা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাস চালক মো. মিষ্টার আলী জানান, তাদের সংগঠনের অধিনে ৪৬ জন শ্রমিক রয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সবারই আয়ের পথ বন্ধ রয়েছে। এতে অনেকের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, এ উপজেলায় ইতোমধ্যে ১০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে, এক-দুই দিনের মধ্যে আরও চাল বিতরণ করা হবে। একেবারে দরিদ্র চালকের তালিকা পেলে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হবে।