শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর
সংলগ্ন ভোগাই নদীর উপর নির্মিত ব্রীজের ছাদের একাংশ ধ্বসে গেছে। গত ২৮
ফেব্রুয়ারি ভোররাতে অতিরিক্ত মাল বোঝাই করা একটি ট্রাক ব্রিজে উঠলে এ
ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা জানান।
প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ব্রীজটি নির্মাণের দশ পেরুতে না
পেরুতেই ধ্বসে পড়ায় এর নির্মাণ কাজের ত্রুটি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে
কর্তৃপক্ষের কাছে জোড় দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, পশ্চিমে কুড়িগ্রাম রৌমারী থেকে সিলেটে ও সুনামগঞ্জ
পর্যন্ত সীমান্ত সড়কপথে যোগাযোগ ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে
তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী ও শেরপুর- ২ আসনের বর্তমান সাংসদ বেগম মতিয়া চৌধুরীর
প্রচেষ্টায় নাকুগাঁও স্থলবন্দর ব্রীজটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২০০১ সালে নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও ভোগাই নদীতে এ ব্রীজ নির্মাণের
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় ১২৮টি পাইল ও ৬টি ব্যাচে ১৮৬.৪০ মিটার
দীর্ঘ এ ব্রীজ নির্মাণে তিন দফায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা থেকে বরাদ্দ বৃদ্ধি
করে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। সরকারের পালাবদল ও ঠিকাদারের
নানাবিধ টালবাহানার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে এ ব্রীজ নির্মাণ কাজ চলে।
অবশেষে ২০০৯ সালের দিকে ব্রীজটি জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলের জন্য
উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সর্বাধিক ১০ টন বহন ক্ষমতা সম্পন্ন ব্রীজটি
উন্মুক্তের পর থেকেই শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও এবং পার্শ্ববর্তী
ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দরের
কয়লা-পাথর বোঝাই ভারি যানবাহন এ ব্রীজের উপর দিয়ে চলাচল করছে। এরইমধ্যে
গত কয়েক বছর ধরে যোগ হয়েছে ভোগাই নদী থেকে উত্তোলনকৃত বালুভর্তি অতিরিক্ত
বোঝাই যানবাহন চলাচল।
একদিকে ভারি যানবাহন অন্যদিকে ব্রীজের নির্মাণ কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন
ওঠেছে। ফলে মাত্র দশ বছর না পেরুতেই॥ ভারি যানবাহনের লোডে ব্রিজের
মাঝামাঝি কয়েক ফুট স্থানজুড়ে ছাদের কিছু অংশ ধ্বসে নিচে পড়ে যায়।
নদীর পূর্বপাড়াবাসী ও রামচন্দ্রকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম খোকা,
আমদানি রফতানিকারক ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন জানান, অতিরিক্ত বালু বোঝাই ও
নাকুগাঁও স্থলবন্দরের অতিরিক্ত কয়লা-পাথর বোঝাই ট্রাক যাতায়াতের ফলে
ব্রিজটি এখন দূর্বল হয়ে পড়েছে। একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমান
উল্লাহ বাদশা জানান, ব্রীজের কাজ নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে করা
হয়েছে এবং প্রতিদিন লোডও বেশি পড়ছে। গত দশ বছরে এর ছাঁদ এতোটাই দূর্বল
হয়ে পড়েছে যে, ব্রিজের বিভিন্নস্থানে ঢালাইয়ের পাথর উঠে এলোমেলো হয়ে
যাচ্ছে। নদীর পশ্চিম পাড়ের নয়াবিল ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী দেওয়ান
জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রীজকে রক্ষা করে স্বাভাবিক চলাচল ঠিক রাখতে হবে।
অতিরিক্ত বোঝাই যানবাহন ব্রীজে উঠা বন্ধ করে দিতে হবে। তা না হলে আমাদের
অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।
এ ব্যপারে শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন
আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, অতিরিক্ত মাল বোঝাই যানবাহন চলাছল করায় এমনটি
ঘটতে পারে। সাময়িকভাবে হাল্কা যানবাহন চলাচলের জন্য ধ্বসে যাওয়া অংশ
মেরামত করা হয়েছে। অতিদ্রুতম সময়ে স্থায়ীভাবে এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ
নেওয়া হচ্ছে।