ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের চরশালেপুর গ্রামের রোকন মোল্যার ছেলে আঃ কুদ্দুস মোল্যা (৪৩) গত ২৫ জানুয়ারী প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে গুরুতর জখম নিয়ে দীর্ঘদিন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই অসহায় রুগীর চিকিৎসা চলাকালিন সময়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও হামলাকারীদের যোগসাজসে চরভদ্রাসন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সিম্পল সার্টিফিকেট কোর্টে পেশ করে আসামিরা জামিনে মুক্ত রয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী রুগীর।
রোববার আহতর ভাই ও মামলার বাদী রওশান মোল্যা জানায়, একই গ্রামের সানাল চৌকদার (৫০) দীর্ঘদিন ধরে আহত আঃ কুদ্দুস মোল্যার স্ত্রী দুলালী বেগম (৩৫) উত্ত্যক্ত করে আসছিল। গত ২৪ জানুয়ারী দুলালী বেগম বাড়ীর পিছনে নির্জন ফসলী মাঠে ছাগল চড়াইতে গেলে সানাল চৌকদার তাকে ধর্ষনের উদ্দেশ্যে ধ্বস্তা ধ্বস্তি করতে থাকে। এ সময় স্ত্রীর সৌরচিৎকারে তার স্বামী বাড়ী থেকে ছুটে আসলে সানাল চৌকদার দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরের দিন সকাল ৮ টায় দুলালী বেগমের স্বামী ওই গ্রামের ছুরমান খানের হাট থেকে বাড়ী ফেরার পথে সানাল চৌকদারের নেতৃত্বে রজ্জব চৌকদার, রশিদ চৌকদার ও রাজ্জাক চৌকদার সহ ৭/৮ জন লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঃ কুদ্দুস মোল্যার উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। একই দিন সকাল ১০ টায় এলাকাবাসী মুমূর্ষ অবস্থায় আঃ কুদ্দুস মোল্যাকে চরভদ্রাসন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আহতর মাথার খুলি ভেঙে ব্রেইনে রক্তক্ষরন ও নাক মুখ কানে রক্ত ক্ষরন দেখে তাৎক্ষনিক ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপতালে রেফার্ড করেন এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মাদ আসাদুল্লাহ (সুমন) আহতর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। গুরুতর আহত রুগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭/৮ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর পূনঃরায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ব্যাপরে আহত ভাই বাদী হয়ে চরভদ্রাসন থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নং-০৪. তাং- ২৬/০২/২০২০খ্রি.
অভিযোগ রয়েছে, আহতর চিকিৎসাকালীন সময়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চরভদ্রাসন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মেডিকেল সার্টিফিকেট চেয়ে পত্র প্রেরন করেন। আসামিরা এ সুযোগে স্থানীয় হাসপতাল ম্যানেজ করে গুরুতর জখমীয় রুগীর নামে সিম্পল সার্টিফিকেট নিয়ে কোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত রয়েছে। মামলার বাদী আরও জানায়, এজাহারে আহত রুগী ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন আছে বলে উল্লেখ থাকলেও পুলিশ চরভদ্রাসন হাসপতাল থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়েছেন।
এ ব্যপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চরভ্রদাসন থানার এসআই কামল হোসেনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, “ আমি চরভদ্রাসন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দুই জায়গায় আহত রুগীর মেডিকেল সার্টিফিকেট চেয়ে পত্র পাঠিয়েছি। চরভদ্রাসন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একটি সিম্পল ইনজুরীর সার্টিফিকেট হাতে পেয়েছি কিন্তু ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপতালের সার্টিফিকেট এখনো হাতে পায় নাই। তিনি আরও জানান, বাদী পক্ষ মামলা পরিচালনার জন্য আমাকে কোনো প্রকার সহায়তা করেন নাই, বাদীপক্ষকে বার বার ফোন দেওয়ার পরও তারা আসেন না”। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপতাােলর রুগীর নামে সার্টিফিকেট প্রদানের কারণ জানতে চাইলে চরভদ্রাসন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল কর্মকর্তা ডাঃ রেদওয়ান আহাম্মেদ বলেন, “ যেহেতু আহত রুগী প্রথমে আমাদের হাসপাতালে এসেছিল এবং পুলিশ সার্টিফিকেট চেয়েছেন তাই আমি সার্টিফিকেট দিয়েছি”। একই দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ হাফিজুর রহমান বলেন, “ মেডিকেল সাটিৃফিকেট দুই হাসপতাল থেকে ইস্যু করা হলেও বিজ্ঞ আদালত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্টিফিকেটই গ্রহন করবেন”।