রাজশাহী পুঠিয়ায় গত ছয় বছরে প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে নতুন ভাবে পুকুর খনন করা হয়েছে। বর্তমানে পুকুর গুলোতে বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করা হচ্ছে। কিন্তু ভূমি কর্মকর্তাদের যোগসাজসের কারণে, জমিগুলির এখনো পর্যন্ত আকার পরির্বতন করা হয়নি। এতে করে সরকার প্রতিবছর বাণিজ্যিক পুকুরগুলো থেকে কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হতে বঞ্ছিত হচ্ছে। জানা গেছে, পুঠিয়া উপজেলার মোট কৃষি জমির পরিমাণ ৩৬ হাজার ৫শ’৬৫ একর। উপজেলার ছয়টি ইউপির মধ্যে মোট চারটি ইউনিয়ান ভূমি অফিস রয়েছে। ভূমি অফিস গুলোর অধিনে গত ছয় বছরে স্থানীয় চাষীদের প্রায় ১৫ হাজার একর ধানী, ফলের বাগান, ভিটা জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। এর মধ্যে শিলমাড়িয়া ও ভালুকগাছি ইউপিতে প্রায় সাড়ে সাত হাজার একর ধানী জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। তবে গত ছয় বছরে মোট কত একর জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান উপজেলা ভূমি অফিস দিতে পারেনি। উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নিয়ম অনুসারে ১৪২২বাং সাল থেকে ধানী জমি প্রতি শতাংশ দুই টাকা হারে খাজনা ধায্য করা হয়েছে। বাণিজ্যিক পুকুরের খাজনা ধরা হয়েছে প্রতি শতাংশ পৌর এলাকায় ৪০ টাকা, ইউনিয়ন এলাকায় ৩০ টাকা হারে। এতে করে সরকার প্রতিবছর উপজেলার নতুন প্রায় ১৫ হাজার একর বানিজ্যিক পুকুর গুলো থেকে কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা। শিলমাড়িয়া এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, এই এলাকায় গত কয়েক বছরে কী পরিমাণ নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে। তা সঠিক বলা খুব কঠিন। নিচু ধানী জমিগুলো প্রায় নতুন পুকুর হয়ে গে।ে জমির মালিকরা অতি লাভের আশায়, মৎস্য চাষীদের মাধ্যমে পুকুর গুলোতে বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করছে। ইউনিয়ান ভূমি অফিসের অসাধু কর্মচারীকে বার্ষিক ভাবে মোটা অংকের সুবিধা দিলে। নতুন পুকুর খনন করা হলোও, ধানী জমি হিসাবে দাওশিলদারা খাজনা আদায় করছে। এ বছর মাছের দাম বেশি হওয়ার কারণে, মৎসচাষীরা বেশি করে পুকুর খননের দিকে ঝুকেছে। দেখা গেছে, উপজেলার ভেতর যাঁরা পুকুর খনন করছে। তারা একটু সমাজের প্রভাবশালী শ্রেনীর। জমি আছে কিন্তু পুকুর খনন করা মতো সাহস, অর্ধসম্পদ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করার ক্ষমতা নেই। তখন সমাজের ধূর্ত প্রকৃতির কোনো ব্যক্তির কাছে, জমির মালিকরা হাজির হচ্ছেন। তখন তারা সবকিছু ম্যানেজ করে পুকুর খনন করছে। আবার অনেক সময়, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে না পারলে, হাইকোর্টের রিট আবেদন করে পুকুর খনন করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উধর্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা রাজনীতিক চাপের কারণে পুকুর খনন করতে দিতে হচ্ছে। এখন পুকুর খনন করছে, জমি ইজারা নিয়ে এক শ্রেণির মৎসচাষীরা। ইজারাদারা পুকুরগুলি ছেড়ে দেয়ার পর খণ্ড খন্ড পুকুরের অংশ দখল করা নিয়ে প্রতিনিয়ত খুনাখুনি হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তারা অর্থের বিনিময় বাণিজ্যিক পুকুর গুলোকে ধানী জমির খাজনা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, পূর্বের তালিকা অনুযায়ী আমরা পুকুর মালিকদের নিকট থেকে পুকুর হিসাবে খাজনা আদায় করছি। গত কয়েক বছরের মধ্যে যে পরিমাণ নতুন পুকুর খনন হয়েছে। সে জমিগুলো মালিকরা ধানী হিসাবে খাজনা দিচ্ছেন। পুকুর মালিকরা জমির আকার পরিবর্তনের কোনো আবেদন আমাদের নিকট জমা দেননি। যার কারণে আমরা তাদের নিকট থেকে ধানী জমি হিসাবে খাজনা করচ্ছি। নতুন পুকুর খনন ও খাজনা বিষয় গুলো জেলা প্রশাসক ও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার নির্দেশনা না দেয়ার পর্যন্ত পুরাতণ নিয়ম অনুসারে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার প্রবীর কুমার বলেন, খাজনা আদায়ের বিষয়ের ব্যাপারটি দেখেন, ইউনিয়ান তাওশিলদারা। তারা কি ভাবে খাজনা আদায় করছে তা আমার জানা নেই। কত একর জমিতে নতুন ভাবে পুকুর খনন করা হয়েছে। সে বলেন আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা ভূমি কমিশনার মোছাম্মত রোমানা আফরোজ ধানী জমিতে নতুন পুকুর খনন করার হচ্ছে। এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যে পুকুরগুলো খনন করা হয়েছে। সেগুলো ব্যবহার ভেদে আগামি বছরে খাজনা আদায় করা হবে।