পাবনায় ধর্ষণ মামলার সাক্ষীকে পুলিশের সামনেই মারধরের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) খাইরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেছে জেলা পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যায় পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীমা আখতার মিলি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শামীমা আখতার জানান, সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে সাক্ষীকে বাঁচাতে ব্যর্থ হওয়ায় দায়িত্বে অবহেলা ও অদক্ষতার অভিযোগে খাইরুলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত শেষে পুলিশ হেডকোয়ার্টার পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। ধর্ষণ মামলার সাক্ষীকে ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে অমানবিক মারধরের অভিযোগ উঠে পাবনা সদর থানার ওসি মো. খাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
আসামীর অনুসারী সন্ত্রাসীরা ঐ পুলিশ কর্মকর্তার সামনে মামলার সাক্ষী আলিম নামের এক যুবককে লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এ বিষয়ে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র নিন্দার ঝড় উঠে।
এ বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীমা আক্তার মিলিকে প্রধান করে ৩ সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বুধবার ঐ তদন্ত কমিটি তদন্ত রির্পোট পেশ করার পর ওসি তদন্তকে ক্লোজ করা হয়। পুলিশ এ ঘটনার প্রধান আসামি আরিফসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ ডিসেম্বর রাতে পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামের মো. পাঞ্জাব প্রাং এর ছেলে মো. ফিরোজ প্রাং তার সহযোগীরা মালিগাছা ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের একটি বাড়ীতে প্রবেশ করে এক যুবতীকে ধর্ষণ করে। ধর্ষিতার চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা এসে ধর্ষক ফিরোজকে আটক করে। এ সময় ধর্ষক ফিরোজের সাথে থাকা অন্যরা পালিয়ে যায়। এদিকে ধর্ষক ফিরোজকে আটকের পর ধর্ষকের বাবাসহ মালিগাছা ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফের সন্ত্রাসী বাহিনী ধর্ষক ফিরোজকে ছাড়িয়ে নিতে ধর্ষিতার বাড়িতে উপস্থিত হয়। এ সময় চেয়ারম্যান শরীফ ধর্ষককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলে ফিরোজকে নিজ জিম্মায় নেয়। ধর্ষিতার বাবা সন্ত্রাসী বাহিনীর চাপের মুখে চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফের কাছে ফিরোজকে হস্তান্তর করেন। চেয়ারম্যান ধর্ষক ফিরোজকে পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ছেড়ে দেয়।
এ ঘটনা জানতে পেরে ধর্ষিতা পরের দিন ২১ ডিসেম্বর রাতে নিজে ধর্ষকের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে বিচার দাবি করে। এ সময় ধর্ষক ফিরোজসহ চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী ধর্ষিতাকে বেধড়ক মারপিট করে। ধর্ষিতাকে মারপিট করার পূর্বে সন্ত্রাসীরা তাকে আবারও গণধর্ষন করে। পরে সন্ত্রাসীরা ধর্ষিতাকে মৃত ভেবে ধর্ষিতার বাড়ির এলাকার ফাঁকা জায়গায় তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা ধর্ষিতাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় ধর্ষিতার পিতা বাদী হয়ে ২১ ডিসেম্বর রাতে ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফসহ ৮জনের নাম উল্ল্যেখসহ আরো অজ্ঞাতনামা ২০/৩০ জনের বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় ৯(১) ২০০০ সালের নারী ও শিশু র্নিাযতন দমন আইন সংশোধন ২০০৩ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তিন আসামীকে গ্রেপ্তার করে।
মালিগাছা ইউনিয়নের ঐ ধর্ষণ মামলার তদন্তের বিষয়ে কথা বলতে গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মুঠোফোনে ডেকে নেন সদর থানার ওসি তদন্ত খাইরুল ইসলাম। এ সময় সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলো স্থানীয় চেয়ারম্যান শরীফের ভাই আরিফের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল। ওসির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাপোকথনের পরেই একটি ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি মালিগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফের ছোট ভাই আরিফুলের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার উপর অতির্কিতে হামলা চালায়। পুলিশের সামনেই সন্ত্রাসীরা এলোপাথারীভাবে লোহার রড, হকি স্টিক দিয়ে পেটাতে শুরু করে। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
পরে স্থানীয়রা আলিমকে উদ্ধার করে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে অবস্থার একটু উন্নতি হলে পুনরায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে আহত আবদুল আলীম সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ব্যাপারে ওসি তদন্ত খাইরুলের বক্তব্য নিতে তার কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীমা আখতার মিলি ওসি তদন্ত খাইরুল ইসলামকে ক্লোজ করার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত শেষে পুলিশ হেডকোয়ার্টার পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।