রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিতর্কিত সেই নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলমকে অবশেষে বদলি করা হয়েছে। গত ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সচিব (প্রশাসন) সৈয়দ মাহবুবুল হক সাক্ষরিত এক আদেশে রাজশাহী পওর বিভাগ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) সিইআইপি-১ ঢাকায় বদলি করা হয়েছে। তবে এরইমধ্যে রাজশাহীতে থাকার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন ওই কর্মকর্তা। রাজনীতিক মহলের যোগসাজতে তিনি বদলি আদেশ ঠেকানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, রাজশাহীতে যোগদান করেই ঘুষ, দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারীতার নজিরবিহীন কারবার শুরু করায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলমের অপসারণ দাবি করে আসছিলেন পাউবো ঠিকাদার সমিতি। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
রাজশাহী পাউবো ঠিকাদারদের একটি সূত্র জানায়, চরম দুর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা কোহিনুর আলমকে বদলীর আদেশ দেওয়া হলেও তিনি এখন এ আদেশ ঠেকানোর জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পাউবোর ঊর্ধ্বতন মহলে দেনদরবার শুরু করেছেন।
পাউবো ঠিকাদাররা জানান, তার বদলীর আদেশ স্থগিত করা হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ইতোমধ্যে ঠিকাদার সমিতির পক্ষে পানি সম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বদলীর আদেশ দ্রুত কার্যকরের দাবি জানানো হয়েছে।
এর আগে পাউবো ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মাহফুজুল আলম লোটন ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার সাক্ষরিত স্মাকলিপি জেলা প্রশাসকের কাছেও দেওয়া হয়। এ ছাড়া পানি সম্পদমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিব, রাজশাহী সিটি মেয়ক ও পুলিশ কমিশনারকেও অনুলিপি পাঠানো হয়।
স্মারকলিপির উদৃতি দিয়ে পাউবো ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মাহফুজুল আলম লোটন বলেন, রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলম গত নভেম্বরে যোগদানের পর থেকে ঘুষ, দুর্নীতি অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতায় মেতে উঠেন। ঠিকাদাররা তার কথা অমান্য করলেই হুমকি, দূর্ব্যবহার, অসাদচারণ করে আসছিলেন। সম্প্রতি রাজশাহীর বাঘা-চারঘাটে ডিপিপি প্রকল্প পাশের নামে বিভিন্ন ঠিাকাদারকে প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
আর গত ৬ জানুয়ারি তার বদলীর আদেশের পর পাউবো কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ঠিকাদাররা আনন্দ প্রকাশ করলেও তিনি বদলি ঠেকিয়ে তাদের দেখে নেয়ার হুমকিও দিয়েছেন।
ঠিকাদাররা অভিযোগ করে বলেন, আগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সম্পাদিত কাজে উৎকোচ আদায়ের চেষ্টা করেন কোহিনুর আলম। ২০১৮ সালের ঠিকাদারদের বকেয়া বিল ও জামানত আটকিয়ে রেখে অনৈতিক আর্থিক উৎকোচ দাবি করছেন তিনি। অফিস সময়ে তাকে তার দপ্তরে পাওয়া যায় না। তিনি রাজশাহীতে যোগদানের পর থেকে দূর্নীতিবাজ হেড কোয়ার্টার শাখা কর্মকর্তা সরদার রুহুল আমিনের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের কাজ করে আসছিলেন।
পাউবো ঠিকাদাররা বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলম খারাপ আচরণ করার জন্য ইতঃপূর্বে অনেকবার বিভিন্নস্থানে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে বর্তমানে বোর্ডের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অনেক অভিযোগও রয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলীর ক্ষমতার উৎস কোথায় প্রশ্ন রেখে পাউবো ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, বিভিন্ন রকমের অনৈতিক ও মনগড়া আইন ও নিয়ম তৈরি করে অফিস ভবনে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার অপচেষ্টা করছেন কোহিনুর আলম। বন্যার সময় রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধসহ সারাদেশের বন্যা মোকাবেলায় পাউবো যে নির্দেশ দেয় সেই অনুযায়ী ঠিকাদাররা জরুরি কাজ বাস্তবায়ন করেন। তবে এইরকম দুই-একটি নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলম বোর্ডের সুনাম ক্ষুন্ন ও ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বদলি আদেশ হলেও কোহিনুর আলম এখন রাজশাহীতে থাকার নানা অপচেস্টা করছেন।