বগুড়ার আদমদীঘিতে কিন্ডার গার্টেন স্কুলের বই নিয়ে লাইব্রেরি, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও প্রকাশনীগুলো রমরমা বই বাণিজ্য করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকার নির্ধারিত পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বৃদ্ধি করা হয়েছে অতিরিক্ত আরও ৩ থেকে ৮টি নির্ধারিত পাঠ্য বই। সংঘবদ্ধ এই স্কুল ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে বই বাণিজ্যের লভ্যাংশ হাতিয়ে নিতে নির্দিষ্ট করেছেন বই প্রাপ্তির স্থান লাইব্রেরি গুলো। এর ফলে লাইব্রেরি গুলো থেকে উচ্চ মূল্যে বইগুলো কিনতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোতে শিক্ষা ব্যবস্থার মান যাই হোক না কেন মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি ফি সহ বছরে নানা কৌশলে নানান ফন্দি ফিকিরে অভিভাবকদের কাছ থেকে আদায় করে থাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ। তারপরও ভাল শিক্ষার আশায় শিশুদের ভর্তি করতে বাধ্য হচ্ছে অভিভাবকরা। এর ফলে প্লে থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত বই কিনতে খরচ হয় প্রায় দেড় হাজার টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার টাকা। কিন্তু এ বইগুলোর স্বাভাবিক মূল্য সর্বোচ্চ সাড়ে ৫০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। এই বই বাণিজ্যের লভ্যাংশের ভাগ নিচ্ছে বিভিন্ন বই প্রকাশনা কোম্পানি, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও লাইব্রেরির মালিকরা। প্রতিটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত লাইব্রেরি গুলোতে তাদের স্কুলের বুক লিষ্ট দিয়ে রেখেছে আর সেখান থেকে বই কিনতে বাধ্য করছেন অভিভাবকদের। এর ফলে বইয়ের মলাটে লেখা উচ্চ মূল্যেই বইগুলো কিনতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আদমদীঘি উপজেলায় রেজিষ্ট্রেশনকৃত ও রেজিষ্ট্রেশন বিহিন মোট ৩৬টি কিন্ডার গার্টেন ও নার্সারি স্কুল রয়েছে। এর শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৫ হাজারের অধিক। এসব কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোর অতিরিক্ত বইয়ের মধ্যে বেবি শ্রেণীতে রয়েছে শিশুর হাসি প্রকাশনীর ছোটদের সবুজ সাথী ১০০ টাকা, আমার অংক লেখ- (১) ১০০ টাকা, কালার কিং প্রকাশনীর চাইল্ড লানিং এবিসি ৯০ টাকা, বুক ভিশন প্রকাশনীর জানতে হলে পড়তে হবে (০) ৮৫ টাকা, স্টান্ডার্ড ওয়ার্ড বুক (০) ৮৫ টাকা, চারু কলা প্রকাশনীর রং ভরি মজা করি (০) ৮৫ টাকা, মায়ের লেখায় আমি লিখি (২) ১০৫ টাকা ও মাই হ্যান্ড রাইটিং বুক (২) ১২০ টাকা। এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণীতে রয়েছে বুক ভিশন প্রকাশনীর ভাষা সৌরভ বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিত রচনা ১৬০ টাকা, গুণতে গুণতে অংক শেখা (২) ১১২ টাকা, এক্সপার্ট কমিউনিকেটিভ ইংলিশ গ্রামার ১৬৫ টাকা, সোনামণিদের কম্পিউটার শিক্ষা (১) ৯০ টাকা, জানতে হলে পড়তে হবে (২) ১১০ টাকা, ইসলামী পাবলিকেশনস এর ছোটমণিদের আরবী ও ইসলাম শিক্ষা (২) ১১০ টাকা, ও চারুকলা প্রকাশনীর রং ভরি মজা করি (২) ৮৫ টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে ছাপানো নজর কারা বিভিন্ন বই উচ্চ মূল্যে বিক্রি করছে লাইব্রেরি গুলো। তাই প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি বইয়ের দাম উচ্চ মূল্য হওয়ায় অভিভাবকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু লাইব্রেরি মালিক জানান, বই প্রকাশনা কোম্পানি আর স্কুল কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে হচ্ছে এই বই বাণিজ্য। ৩০ থেকে ৫০ টাকা মূল্যের বইয়ের দাম হচ্ছে ৮৫ থেকে ১৬৫ টাকা। এ বই বিক্রি করে লাইব্রেরির মালিকরা ১০% থেকে ১৫% লভ্যাংশ পেলেও এর ৬০% থেকে ৬৫% লভ্যাংশ ভাগ করে নিচ্ছে এই বই বাণিজ্যে লিপ্ত বই প্রকাশনা কোম্পানি আর স্কুল কর্তৃপক্ষ। এব্যাপারে উপজেলা সদরের কয়েকটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা হলে তারা জানান, সরকারি পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য বই পাঠ্য করার নিয়ম না থাকলেও শিশুদের ভালোর জন্যই এসব অতিরিক্ত বই পড়ানো হয়ে থাকে। এর ফলে শিশুদের নানামুখি শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে।
এ ব্যাপারে আদমদীঘি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সামছুল ইসলাম দেওয়ান বলেন, উপজেলার অনেক কিন্ডার গার্টেন স্কুলের রেজিস্ট্রেশন নাই এবং কিছু কিছু স্কুলের রেজিষ্ট্রেশন থাকা শর্তেও এরা কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে না। কিন্ডার গার্টেনগুলোকে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতা মূলক করে নিয়ম নীতির মধ্যে আনা প্রয়োজন। তিনি আরোও বলেন, এ সব উচ্চ মূল্যে অতিরিক্ত বই কিনে এক দিকে যেমন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাঁধে বইয়ের বোঝা তুলে দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে ভিষণ ভাবে প্রতারিত হচ্ছে অভিভাবকরা।