ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা গ্রামে পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় গত ২৭ দিন ধরে বেকু মেশিন দিয়ে দিনরাত বালু মাটি উত্তোলনের ধুম লেগে আছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মৃত বাবু মোল্যার ছেলে শান্ত মোল্যা (৩৪) ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা মিলে ভাঙন কবলিত পদ্মা পর থেকে অবৈধ বেকু মেশিন দিয়ে বালু মাটি তুলে রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এতে উক্ত গ্রাম সহ আশপাশের ফসলী মাঠ পদ্মা নদীর ভাঙনের হুমকীর মুখে রয়েছে বলে স্থানীয়রা শঙ্কা প্রকাশ করে চলেছেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ফসলী মাঠ ভাঙনের কারনে পদ্মা নদী বসতবাড়ীর দিকে এগিয়ে আসছে। আর এ বছর শুস্ক মৌসুমে পদ্মা পারের চর জমিতে বিশাল পুকুরাকৃতি করে বেকু মেশিন দিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তাতে আশপাশের গ্রাম সহ ফসলী মাঠ ভাঙনের হুমকীতে রয়েছে। প্রভাবশালীরা বেকু মেশিন দিয়ে পদ্মা পারের বালু মাটি ট্রাক ও লড়ি বোঝাই করে স্থানীয় ইটভাটা সহ বিভিন্ন বসতভিটে ভরাট কাজে বাণিজ্য করে চলেছে বলে অভিযোগ। আর সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ওই এলাকার পদ্মা পার ঘুরে বেকু মেশিন বন্ধ করে দেওয়ার মৌখিক নির্দেশ দেওয়ার পরও পূনরায় বহাল তবিয়তে বেকু মেশিন দিয়ে বালু মাটি তুলে রমরমা বাণিজ্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অবশ্য উক্ত বেকু মেশিন মালিক শান্ত মোর্যাকে এ ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, “ সরকারি খাস জমিতে নয়, আমরা ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমিতে বেকু মেশিন দিয়ে মাটি তুলে ব্যবসা করে চলেছি। তিনি আরও বলেন, মাত্র কয়েক দিন আগে প্রশাসনের লোকজন এসে বেকু মেশিনটির ক্ষতি করে গিয়েছিল। তাই দু’দিন বন্ধ থাকার পর বেকু মেশিনটি মেরামত করে পূনরায় চালাচ্ছি, কিন্ত এখন আর প্রশাসনের ভয় নাই বলেও তিনি জানান”।
বৃহস্পতিবার এ ব্যপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ফারজানা নাসরীনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “ আমি দু’দিন আগে ওই গ্রামের পদ্মা পারে চলমান বেকু মেশনিটি পরিদর্শনের জন্য ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা আবু বক্কার ছিদ্দীককে পাঠিয়ে ছিলাম। বেকু মেশিনটি সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে চালানো হচ্ছে বলে তহশিলদার আমাকে জানিয়েছে”। আর উক্ত তহশিলদার আবু বক্কার ছিদ্দীক জানান, “ আমি মৌখিকভাবে বেকু মেশিনটি বন্ধ রাখতে বলেছি এবং জমি ওয়ালাদের কাগজপত্র দেখাতে বলেছি, কিন্ত তারা অফিসে আসে নাই”।
পদ্মা পার ঘুরে জানা যায়, উন্মুক্ত ফসলী মাঠের মাঝখানের বেকু মেশিন দিয়ে গভীর খনন করে বালু মাটি তুলে ট্রাকে ও লড়িতে পাচার করা হচ্ছে। এতে ফসলী মাঠের মধ্যে প্রায় ৫ একর জমি জুড়ে একটি কোলের রূপ নিয়েছে। মাটি পাচারের জন্য তিনটি লড়ি ও চারটি ট্রাক ফসলী মাঠের মধ্যে দিয়ে এসে একের পর এক বেকু মেশিনের মাটি লোড নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাচার হচ্ছে। প্রশাসনিক লোকজন আসে কি-না তা লক্ষ্য রাখার জন্য উক্ত পদ্মা পারে যাওয়ার বিভিন্ন মেঠোপথে পাহাড়াদার নিয়োজিত রয়েছে। এভাবে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত এবং সন্ধা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বেকু দিয়ে বালু মাটি তুলার ধুম লেগেই আছে। উক্ত ফসলী মাঠের এক কৃষক চানমিয়া মৃধা জানয়, “ এ বছর শুস্ক মৌসুমে বেকু দিয়ে যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে তাতে এই পদ্মা পারে বর্ষা মৌসুমে ফসলী মাঠ সহ আমাদের বসতভিটে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে”। আরেক কৃষক শেখ হালিম (৫৫) বলেন, “ পদ্মা পারে বাস করি ভাই, তাই ওই প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীদের ভয়ে কিছু বলতে সাহস পাই না। প্রতিবাদ করলেই আমাদের উপর নির্যাতন চলে আসে”।