ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় রিচিং-আউট অব-স্কুল চিলড্রেন (রক্স) ফেইজ-২ প্রকল্পের আওতায় চলমান আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির অংশ ও দশজন শিক্ষকের ছয় মাসের বেতন আত্নসাতের অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। এ প্রকল্পের আওতায় গত ক’দিন আগে উপজেলার ৪২০জন শিক্ষার্থীর জনপ্রতি ১৫২০ টাকা করে মোট ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৪শ’ টাকা উপবৃত্তি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরমধ্যে প্রায় ৩শ’ শিক্ষার্থী প্রতিজনকে ১৫২০ টাকা করে উপজেলা থেকে উপবৃত্তির অর্থ প্রদান করার পর শিক্ষিকারা ছাত্রীদের স্কুলে নিয়ে ৫শ’ টাকা করে রেখে জনপ্রতি ১০২০ টাকা প্রদান করেছেন বলে অভিযোগ। এছাড়া এ বছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উপজেলার ১০টি আনন্দ স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী বহিস্কৃত হওয়ার দায় দিয়ে ১০ জন শিক্ষিকার ছয় মাসের বেতন প্রায় ৩ লক্ষ টাকা প্রদান না করে বছরের শেষ দিন মঙ্গলবার প্রকল্প গুটিয়ে কো-অর্ডিনেটর উধাও হয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
মঙ্গলবার অর্ধদিবস পর্যন্ত উক্ত প্রকল্প কো-অর্ডিনেটর বর্ণালী বিশ্বাসকে ১২ দফায় ফোন দেওয়ার পরও তিনি মুঠোফোন রিসিপ করেন নাই। তবে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. মোতালেব হোসেন মোল্যা জানান, “ উক্ত প্রকল্প কো-অর্ডিনেটর আমার ফোনও রিসিপ করছে না, প্রকল্প কো-অর্ডিনেটর শিক্ষিকাদের বেতন আত্নসাত করে বছর শেষে প্রকল্প গুটিয়ে উধাও রয়েছেন”।
এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের রুমে অবস্থানরত ভুক্তভোগী শিক্ষিকা শেফালী আক্তার, তাহমিনা পারভীন, ছাদিয়া আক্তার ও রত্না বেগম সহ অনেকে বলেন, “এ বছর সমাপনী পরীক্ষায় আমাদের স্কুলের দু’একজন শিক্ষার্থী দুর্নীতির কারনে বহিস্কার হয়েছে। আর এ অজুহাত দিয়ে প্রকল্প কো-অর্ডিনেটর প্রতি শিক্ষকের মাসে ৫ হাজার করে ছয় মাসের ৩০ হাজার টাকা বেতন সহ ১০জন শিক্ষিকার বেতন বাবদ মোট প্রায় ৩ লাখ টাকা না দিয়ে উধাও হয়েছে”। এ সময় উপজেলার দুর্জন প্রামানিকের বাড়ী আনন্দ স্কুলের আরেক হতাশাগ্রস্থ শিক্ষক সেলিম হুসাইন বলেন, “ স্কুল নিয়ে গত ছয় মাস ধরে যত পরিশ্রম করেছি, সব বিফলে গেছে”।
একই দিন সরেজমিনে উপজেলার গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন আনন্দ স্কুল ঘুরে জানা যায়, এ প্রকল্পের আওতায় গত ২০ ডিসেম্বর শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও সমাপনী পরীক্ষার খরচাবলী বাবদ প্রতি শিক্ষার্থীকে ১৫২০ টাকা করে প্রদান করা হলেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫শ’ করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা চরহরিরামপুর ইউনিয়নের শালেপুর গ্রামের হালিম মোল্যার বাড়ী আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা আলেয়া বেগমকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, “ সমাপনী পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের ডিআর ফি ও পরীক্ষা ফি বাবদ প্রায় একশো করে টাকা আমরা বহন করেছি, তাই শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র উপ-বৃত্তি বাবদ ৭২০ টাকা দেওয়া হয়েছে, কিন্ত সমাপনী পরীক্ষার যাতায়াত বাবদ বাকী ৮০০ টাকা শিক্ষার্থীরা পাবে না”।
একই দিন উপজেলা সদরে বিএস ডাঙ্গী গ্রামের হেলিপোর্ট আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থী মিথিলা আক্তার, রানী বেগম, ঝুমা আক্তার ও সাথী আক্তার সহ অনেকে জানায়, “ উপজেলা থেকে উপবৃত্তি অর্থ বাবদ আমাদের ১৫২০ টাকা দেওয়ার পর শিক্ষিকা সোমা বৈদ্য সবাইকে তার বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার পর দুপুরের খাবার খাওয়ান। পরে শিশুদের কাছ থেকে ৫০০ করে টাকা রেখে উপবৃত্তি বাবদ ১০২০ টাকা করে প্রদান করেন”। তবে শিশু শিক্ষার্থী রানী আক্তারের মা করিমুন নেছা জানায়, “ আমার মেয়েকে উপবৃত্তির টাকা কম পরিমানে দেওয়ার পরের দিন আমি শিক্ষিকা সোমা বৈদ্যর বাড়ীতে গিয়ে ঝগড়া করে পাওনা টাকা উঠিয়ে এনেছি”।